আলোর প্রতিসরণ
সূচিপত্র
ভৌত রাশি ও পরিমাপ
গতি
বল
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
পদার্থের অবস্থা ও চাপ
বস্তুর উপর তাপের প্রভাব
তরঙ্গ ও শব্দ
আলোর প্রতিফলন
আলোর প্রতিসরণ
দশম অধ্যায় স্থিরতড়িৎ
একাদশ অধ্যায় চল তড়িৎ
তড়িতের চৌম্বক ক্রিয়া
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স
জীবন বাঁচাতে পদার্থবিজ্ঞান
সূত্রাবলি
গতি
বল
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
পদার্থের অবস্থা ও চাপ
বস্তুর উপর তাপের প্রভাব
তরঙ্গ ও শব্দ
আলোর প্রতিফলন
আলোর প্রতিসরণ
দশম অধ্যায় স্থিরতড়িৎ
একাদশ অধ্যায় চল তড়িৎ
তড়িতের চৌম্বক ক্রিয়া
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স
জীবন বাঁচাতে পদার্থবিজ্ঞান
সূত্রাবলি
একটা লাঠিকে তির্যকভাবে পানির মধ্যে ডুবালে
বাঁকা দেখায়। জগ ভরা স্বচ্ছ পানির দিকে উপর থেকে তাকালে জগের তলা উপরে উঠেছে বলে
মনে হয়। এসব ঘটনা আমরা দৈনন্দিন জীবনে নিশ্চয়ই লক্ষ করেছি। এ ঘটনাগুলোর মূলে
রয়েছে আলোর একটা বিশেষ ধর্ম যা হচ্ছে ‘প্রতিসরণ’। প্রতিসরণের একটা বিশেষ ঘটনা
হচ্ছে পূর্ণ অভ্যšতরীণ প্রতিফলন। পূর্ণ অভ্যšতরীণ প্রতিফলনের জন্যই মরুভূমিতে
মরীচিকার সৃষ্টি হয়, হীরককে উজ্জ্বল দেখায়, অপটিক্যাল ফাইবারের সাহায্যে তথ্য
সংকেত প্রেরণ করা হয়। আমরা অনেকেই দৃষ্টির ত্র“টি দূর করার জন্য চশমা ব্যবহার করে
থাকি। এই চশমার কাচ একটা লেন্স। আমরা এই অধ্যায়ে এসব বিষয় আলোচনা করব।]
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা -
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা -
Contents
চিত্র ৯.১ লক্ষ কর। এখানে বায়ু এবং কাচ দুটি
মাধ্যম দেখানো হয়েছে। আলোক রশ্মি বায়ু মাধ্যমে AB পথে এসে মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদতল
PQ এর B বিন্দুতে তির্যকভাবে আপতিত হলো। সোজা পথে গেলে আলো কাচের মধ্যে BC' পথে
যেতো কিন্তু তা না যেয়ে BC পথে বেঁকে গিয়েছে। আলোক রশ্মির এই বেঁকে যাবার ঘটনাই
হচ্ছে প্রতিসরণ। সুতরাং আলোক রশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যমের থেকে ভিন্ন স্বচ্ছ মাধ্যমে
তির্যকভাবে প্রবেশ করলে দুই মাধ্যমের বিভেদতলে এর দিক পরিবর্তিত হয়। আলোক রশ্মির
এই দিক পরিবর্তনের ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে।
চিত্র ৯.১-এ AB আপতিত রশ্মি, BC প্রতিসৃত
রশ্মি এবং NBN', B বিন্দুতে PQ এর উপর অঙ্কিত অভিলম্ব। ∠ABN
কে আপতন কোণ i এবং ∠N'BC কে প্রতিসরণ কোণ r বলে।
বিভিন্ন মাধ্যমে আলোর বেগ বিভিন্ন তাই মাধ্যম
পরিবর্তনের সময় আলোর প্রতিসরণ ঘটে। আলোক রশ্মি হালকা মাধ্যম (যেমন বায়ু) থেকে ঘন
মাধ্যমে (যেমন কাচে) প্রতিসৃত হলে প্রতিসৃত রশ্মি অভিলম্বের দিকে বেঁকে যায়
অর্থাৎ i > r। আবার বিপরীতভাবে ঘন মাধ্যম থেকে আলোক রশ্মি হালকা মাধ্যমে
প্রতিসৃত হলে (চিত্র ৯.২) আলোক রশ্মি অভিলম্ব থেকে দূরে বেঁকে যাবে। অর্থাৎ
এক্ষেত্রে r > i।
করে দেখ : একটি সাদা কাগজের উপর একটি কালির দাগ দাও এবং তার উপর একটি স্বচ্ছ কাচের ফলক রাখ। কী দেখলে?
|
O বিন্দু O' বিন্দুতে উঠে এসেছে। আলোর
প্রতিসরণের জন্য এরূপ ঘটে। O বিন্দু থেকে আগত আলোক রশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে এসে হালকা
মাধ্যমে প্রতিসৃত হয় (চিত্র ৯.৩) ফলে অভিলম্ব থেকে প্রতিসৃত রশ্মিগুলো দূরে বেঁকে
যায়। প্রতিসৃত রশ্মিগুলোকে পিছনে বর্ধিত করলে O' বিন্দু থেকে আসছে বলে মনে হয়।
O' বিন্দু O বিন্দুর অবাস্তব প্রতিবিম্ব। তাই উপর থেকে দেখলে O বিন্দু O' বিন্দুতে
উঠে এসেছে বলে মনে হয়।
আমরা ইতোমধ্যে চিত্র :
৯.১ (এখানে চিত্র : ৯.৪) এ লক্ষ করেছি AB আপতিত
রশ্মি, BC প্রতিসৃত রশ্মি এবং NBN', B বিন্দুতে PQ এর উপর অঙ্কিত অভিলম্ব। ∠ABN
কে আপতন কোণ i এবং ∠N'BC কে প্রতিসরণ কোণ r বলে।
এখন যদি আপতন কোণ বৃদ্ধি করা হয় তবে প্রতিসরণ কোণও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু প্রতিসরণ কোণ আপতন কোণের সমাণুপাতিক হবে না, অর্থাৎ আপতন কোণ i দ্বিগুণ করলে প্রতিসরণ কোণ r দ্বিগুণ হবে না। দেখা গেছে i1, i2, i3 ....... আপতন কোণের জন্য প্রতিসরণ কোণ যথাক্রমে r1, r2, r3 ...... ইত্যাদি হলে,
ধ্রুবক হবে। এই ধ্রুবকটির
মান নির্ভর করবে আপতন ও প্রতিসরণ মাধ্যমের প্রকৃতি এবং আপতিত আলোর বর্ণের উপর।
আবার দেখা যাচ্ছে AB, BC এবং অভিলম্ব NBN' তিনটি রেখাই তোমার বইয়ের পৃষ্ঠার সমতলে
আছে। এর থেকে দেখা যায় আলোর প্রতিসরণ নিম্নোক্ত দুটি সূত্র মেনে চলে।
এখন যদি আপতন কোণ বৃদ্ধি করা হয় তবে প্রতিসরণ কোণও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু প্রতিসরণ কোণ আপতন কোণের সমাণুপাতিক হবে না, অর্থাৎ আপতন কোণ i দ্বিগুণ করলে প্রতিসরণ কোণ r দ্বিগুণ হবে না। দেখা গেছে i1, i2, i3 ....... আপতন কোণের জন্য প্রতিসরণ কোণ যথাক্রমে r1, r2, r3 ...... ইত্যাদি হলে,

প্রথম সূত্র : আপতিত
রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে বিভেদতলের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে
অবস্থান করে।
দ্বিতীয় সূত্র: একজোড়া
নির্দিষ্ট মাধ্যম এবং নির্দিষ্ট বর্ণের আলোক রশ্মির ক্ষেত্রে আপতন কোণের সাইন এবং
প্রতিসরণ কোণের সাইন-এর অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক।
এই দ্বিতীয় সূত্রকে স্নেলের সূত্রও বলে।
একজোড়া নির্দিষ্ট মাধ্যম এবং কোনো একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোকরশ্মি এক মাধ্যম থেকে অপর মাধ্যমে প্রতিসৃত হলে যদি আপতন কোণ i এবং প্রতিসরণ কোণ r হয় তাহলে

আলোকরশ্মি যদি a মাধ্যম থেকে b মাধ্যমে
প্রবেশ করে তবে, a মাধ্যমের সাপেক্ষে b মাধ্যমের আপেক্ষিক প্রতিসরণাঙ্ক, (চিত্র
৯.৫)
n এর নিচে ডানদিকের অক্ষরটি নির্দেশ করে কোন মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক এবং বামদিকের অক্ষরটি নির্দেশ করে কোন মাধ্যমের সাপেক্ষে।

n এর নিচে ডানদিকের অক্ষরটি নির্দেশ করে কোন মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক এবং বামদিকের অক্ষরটি নির্দেশ করে কোন মাধ্যমের সাপেক্ষে।
আবার শূন্য স্থান থেকে যখন আলোক রশ্মি কোনো
মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন মাধ্যমের যে প্রতিসরণাঙ্ক হয় তাকে ঐ বর্ণের জন্য ঐ
মাধ্যমের পরম প্রতিসরণাঙ্ক বলে (চিত্র ৯.৬)। যদি শূন্য স্থান থেকে b মাধ্যমে আলো
প্রতিসৃত হয় তবে, b মাধ্যমের পরম প্রতিসরণাঙ্ক
। এক্ষেত্রে b এর বামদিকে
কিছু না লিখে কেবল ডানদিকে মাধ্যম লেখা হয়। যেমন b মাধ্যমের পরম প্রতিসরণাঙ্ক
।


আবার আলোকরশ্মি যদি b মাধ্যম থেকে a মাধ্যমে
প্রবেশ করে তবে সেক্ষেত্রে আলোকরশ্মির প্রত্যাবর্তনের সূত্রানুসারে (৯.৬ চিত্রে)
CB হবে আপতিত রশ্মি, BA প্রতিসৃত রশ্মি, অর্থাৎ আপতন কোণ = r ও প্রতিসরণ কোণ = i
এবং b মাধ্যমের সাপেক্ষে a মাধ্যমের আপেক্ষিক প্রতিসরণাঙ্ক হবে [সমীকরণ ৯.১
অনুসারে]

সুতরাং মনে রাখতে হবে
এবং বিপরীতক্রমে
আবার, প্রতিসরণাঙ্ককে আলোর বেগের সাহায্যেও প্রকাশ করা যায়,
=
a মাধ্যমে আলোর বেগ / b মাধ্যমে আলোর বেগ
=
শুন্য মাধ্যমে আলোর বেগ / b মাধ্যমে আলোর বেগ


আবার, প্রতিসরণাঙ্ককে আলোর বেগের সাহায্যেও প্রকাশ করা যায়,


যে মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক বেশি সেই মাধ্যম বেশি ঘন এবং তাতে আলোর বেগ কম। আর যে মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক কম সেই মাধ্যম কম ঘন এবং তাতে আলোর বেগ বেশি। গাণিতিক উদাহরণ ৯.১ :বায়ু থেকে পানিতে প্রতিসরণের ক্ষেত্রে আপতন কোণ 30° এবং প্রতিসরণ কোণ 19° হলে, বায়ু সাপেক্ষে পানির প্রতিসরণাঙ্ক কত ?
আমরা জানি,
![]() ![]() উত্তর : নির্ণেয় প্রতিসরণাঙ্ক 1.538 |
দেওয়া আছে,
আপতন কোণ i = 30° প্রতিসরণ কোণ r = 19° বায়ু সাপেক্ষে পানির প্রতিসরণাঙ্ক ![]() |
গাণিতিক উদাহরণ ৯.২ : বায়ুর
সাপেক্ষে পানির প্রতিসরণাঙ্ক ১.৩৩ হলে পানি সাপেক্ষে বায়ুর প্রতিসরণাঙ্ক কত ?
আমরা জানি,
![]() ![]() উ : 0.75 |
দেওয়া আছে,
বায়ুর সাপেক্ষে পানির প্রতিসরণাঙ্ক, ![]() পানির সাপেক্ষে বায়ুর প্রতিসরণাঙ্ক, ![]() |
ক্রান্তি কোণ : ঘন মাধ্যম থেকে আলোক-রশ্মি যখন হালকা মাধ্যমে প্রতিসৃত হয়, তখন প্রতিসৃত রশ্মিটি হালকা মাধ্যমে অভিলম্ব থেকে আরও দূরে বেঁকে যায়, ফলে আপতন কোণের চেয়ে প্রতিসরণ কোণ বড় হয়। ১. ধরি, AB হলো কাচ এবং বায়ু মাধ্যমের বিভেদ তল। কাচ ঘন মাধ্যম এবং বায়ু হালকা মাধ্যম। কাচের মধ্যে P বিন্দু থেকে PQ রশ্মি ক্ষুদ্র আপতন কোণে AB বিভেদ তলের Q বিন্দুতে আপতিত হলে বায়ু মাধ্যমে প্রতিসৃত রশ্মি QR হবে [চিত্র : ৯.৭ ক]। এক্ষেত্রে আপতন কোণ (


২. এখন ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ বৃদ্ধি করলে,
হালকা মাধ্যমে প্রতিসরণ কোণও বৃদ্ধি পাবে। এইভাবে আপতন কোণ বৃদ্ধি করলে শেষে একটি
বিশেষ আপতন কোণ
পাওয়া
যাবে (চিত্র ৯.৭ খ) যার জন্য প্রতিসৃত রশ্মি
মাধ্যম
দুটির বিভেদ তল AB বরাবর চলে যাবে অর্থাৎ প্রতিসরণ কোণ
হবে। এই অবস্থায় ঘন
মাধ্যমের আপতন কোণটিকে (
) হালকা মাধ্যমের সাপেক্ষে
ঘন মাধ্যমের ক্রান্তি কোণ বলে। ৯.৭ খ নং চিত্রে
= ক্রান্তি কোণ। এই
ক্রান্তি কোণের মানও মাধ্যমদ্বয়ের প্রকৃতি এবং আলোর বর্ণের উপর নির্ভর করে।





পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন : ঘন
মাধ্যমে আপতন কোণটিকে ক্রান্তি কোণের চেয়ে আরও একটু বাড়ালে (
) আলোক রশ্মির সবটুকুই দুই
মাধ্যমের বিভেদ-তলে সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হয়ে ঘন মাধ্যমেই ফিরে আসে। এই অবস্থায় আর
কোনো প্রতিসৃত রশ্মি পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় মাধ্যম দু’টির বিভেদ-তল দর্পনের
মত আচরণ করে। এই ঘটনাকে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন বলে।

[চিত্র ৯.৭ গ] এ ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ
মাধ্যম
দুটির ক্রান্তি কোণ
এর
চেয়ে বড়। সেইজন্য
রশ্মিটি
দুই মাধ্যমের বিভেদ তল AB- এর উপর আপতিত হয়ে প্রতিফলনের নিয়মানুসারে QR2 পথে
প্রতিফলিত হয়েছে।



পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের শর্ত :
·
আলোক-রশ্মিকে অবশ্যই ঘন মাধ্যম থেকে হালকা
মাধ্যমের অভিমুখে যেতে হবে এবং দুই মাধ্যমের বিভেদ-তলে আপতিত হতে হবে।
·
ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ ক্রান্তি কোণের চেয়ে
বড় হতে হবে।
মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত পথিক সময়ে সময়ে
দূরবর্তী গাছের উল্টানো প্রতিবিম্ব দেখে মনে করেন সেখানে পানি আছে। কিন্তু গাছের
কাছে গেলে তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন যে সেখানে কোনো পানি নাই। আলোর পূর্ণ
অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের জন্যই এ রকম হয়। এটাই মরীচিকা।
চিত্র : ৯.৮ সূর্যের প্রচণ্ডতাপে
মরুভূমির বালি উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বালিসংলগ্ন বায়ুস্তরগুলোও গরম হয়ে ওঠে।
নিচের বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়, তবে উপরের বায়ু নিচের বায়ু স্তরের তুলনায় ঠান্ডা
থাকায় ঘন থাকে। এখন গাছ থেকে যে আলো আসে তা ঘনতর মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে
প্রবেশ করতে থাকে। এর ফলে প্রতিসৃত রশ্মি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এক
সময় ঐ আলোক-রশ্মি কোনো একটি বায়ুস্তরে ক্রান্তি কোণের চেয়ে বড় কোণে আপতিত হয়
ও আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটে। ঐ সময়েই গাছের উল্টানো প্রতিবিম্ব দেখা
যায় [চিত্র ৯.৮], যাকে আমরা মরীচিকা বলি।
অপটিক্যাল ফাইবার তৈরি করা হয় কাচ বা
প্লাস্টিকের খুব সরু, দীর্ঘ নমনীয় অথচ নিরেট ফাইবার বা তন্তু দ্বারা। এই ফাইবারের
পদার্থের প্রতিসরণাঙ্ক ১.৭। ফাইবারের উপর অপেক্ষকৃত কম প্রতিসরণাঙ্কের (১.৫)
পদার্থের একটি আবরণ দেওয়া হয়। ফাইবারের একপ্রান্তে ক্ষুদ্র কোণে আপতিত আলোক
রশ্মি ফাইবারের ভিতরে বারবার পূর্ণ অভ্যন্তরীণভাবে প্রতিফলিত হয়ে শেষ পর্যন্ত
অন্য প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে আসে।
ফাইবারটি বাকাঁ বা পাকানো অবস্থায় থাকলেও
আলোক এর ভিতর দিয়ে প্রায় কোনো শক্তিক্ষয় ছাড়াই পাঠানো যায় (চিত্র ৯.৯)।
একগুচ্ছ অপটিক্যাল ফাইবারকে আলোক নল বলে।
স্বাস্থ্যক্ষেত্র এবং টেলিকমিউনিকেশনে
অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার:
কোনো রোগীর পাকস্থলির ভিতরের দেয়াল পরীক্ষা করতে হলে একটি আলোক নলকে মুখের ভিতর দিয়ে পাকস্থলিতে ঢোকানো হয়। এই আলোক নলের এক সেট আলোকীয় তন্তু দিয়ে আলো পাঠিয়ে পাকস্থলির দেয়ালের সংশ্লিষ্ট অংশকে আলোকিত করা হয়, অন্য সেট দিয়ে ওই আলোকিত অংশকে বাইরে থেকে দেখা যায়। এই পদ্ধতি এন্ডোস্কোপি নামে পরিচিত। এভাবে আলোক নল ঢুকিয়ে রক্তবাহী ধমনি বা শিরার ব্লক বা হৃৎপিণ্ডের ভালভগুলোর ক্রিয়া দেখা যায়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বৈদ্যুতিক সংকেত আদান-প্রদানের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা হয়; অবশ্য আগে বৈদ্যুতিক সংকেতকে প্রথমে আলোক সংকেতে রূপান্তরিত করে নিতে হয়। প্রায় ২০০০ টেলিফোন সংকেতকে এভাবে একসঙ্গে একটি অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে সঞ্চালন করা যায়। এতে সংকেতগুলোর তীব্রতার প্রায় কোনো পরিবর্তন হয় না। অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
দুটি গোলীয় পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ কোনো
স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যমকে লেন্স বলে।
লেন্স দুই রকমের হয় : (i) উত্তল লেন্স বা অভিসারী লেন্স ও (ii) অবতল লেন্স বা অপসারী লেন্স
উত্তল লেন্স : যে লেন্সের মধ্যভাগ পুরু এবং প্রান্তভাগ সরু তাকে উত্তল লেন্স বলে। উত্তল লেন্সের উপর সমান্তরাল রশিগুচ্ছ আপতিত হলে প্রতিসরণের পর নির্গত হওয়ার সময় অভিসারী করে বলে উত্তল লেন্সকে অভিসারী লেন্সও বলে [চিত্র ৯.১০ ক]।
পর্যবেক্ষণ: গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদে পিচ ঢালা পথে হাটার সময় বা যানবাহনে যাবার সময় মাঝে মধ্যে হয়তো দেখে থাকবে রাস্তা চিকচিক করছে। মনে হবে যেন রা¯তায় পানি জমেছে। এখানেও মরুভুমির মরিচিকার ন্যায় ঘটনা ঘটেছে।
লেন্স দুই রকমের হয় : (i) উত্তল লেন্স বা অভিসারী লেন্স ও (ii) অবতল লেন্স বা অপসারী লেন্স
উত্তল লেন্স : যে লেন্সের মধ্যভাগ পুরু এবং প্রান্তভাগ সরু তাকে উত্তল লেন্স বলে। উত্তল লেন্সের উপর সমান্তরাল রশিগুচ্ছ আপতিত হলে প্রতিসরণের পর নির্গত হওয়ার সময় অভিসারী করে বলে উত্তল লেন্সকে অভিসারী লেন্সও বলে [চিত্র ৯.১০ ক]।
পর্যবেক্ষণ: গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদে পিচ ঢালা পথে হাটার সময় বা যানবাহনে যাবার সময় মাঝে মধ্যে হয়তো দেখে থাকবে রাস্তা চিকচিক করছে। মনে হবে যেন রা¯তায় পানি জমেছে। এখানেও মরুভুমির মরিচিকার ন্যায় ঘটনা ঘটেছে।
অবতল লেন্স : যে
লেন্সের মধ্যভাগ সরু এবং প্রান্তভাগ ক্রমশ: পুরু তাকে অবতল লেন্স বলে। অবতল লেন্সে
সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ আপতিত হলে প্রতিসরণের পর নির্গত হওয়ার সময় অপসারী হয় বলে
অবতল লেন্সকে অপসারী লেন্সও বলে [চিত্র ৯.১০ খ]।
বক্রতার কেন্দ্র : লেন্সের
উভয় পৃষ্ঠই এক একটি নির্দিষ্ট গোলকের অংশ। প্রত্যেক গোলকের কেন্দ্রকে ঐ পৃষ্ঠের
বক্রতার কেন্দ্র বলে। ৯.১১ নং চিত্রে C1 এবং
C2, LN লেন্সের দু’টি বক্রতা
কেন্দ্র। যদি লেন্সের কোনো একটি পৃষ্ঠ গোলীয় না হয়ে সমতল হয় তবে তার বক্রতা
কেন্দ্র অসীমে অবস্থিত হবে।
প্রধান অক্ষ : লেন্সের দুটি গোলীয় পৃষ্ঠ থাকে। এই পৃষ্ঠদ্বয়ের বক্রতা কেন্দ্র দু’টিকে যোগ করলে যে সরলরেখা পাওয়া যায় তাকে ঐ লেন্সের প্রধান অক্ষ বলে। ৯.১১নং চিত্রে, C1C2 সরলরেখাটি লেন্সের প্রধান অক্ষ।
প্রধান অক্ষ : লেন্সের দুটি গোলীয় পৃষ্ঠ থাকে। এই পৃষ্ঠদ্বয়ের বক্রতা কেন্দ্র দু’টিকে যোগ করলে যে সরলরেখা পাওয়া যায় তাকে ঐ লেন্সের প্রধান অক্ষ বলে। ৯.১১নং চিত্রে, C1C2 সরলরেখাটি লেন্সের প্রধান অক্ষ।
আলোক কেন্দ্র : আলোক
কেন্দ্র হলো লেন্সের মধ্যে প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট বিন্দু, যার
মধ্য দিয়ে কোনো রশ্মি অতিক্রম করলে প্রতিসরণের পর লেন্সের অপর পৃষ্ঠ থেকে নির্গত
হওয়ার সময় আপতিত রশ্মির সমান্তরালভাবে নির্গত হয়। ৯.১২ নং চিত্রে লেন্সের একপৃষ্ঠে
PQ রশ্মি আপতিত হয়ে QR পথে প্রতিসৃত হয়েছে। এই রশ্মি অপর পৃষ্ঠ থেকে RS পথে
নির্গত হয়েছে। নির্গত রশ্মি RS এবং আপতিত রশ্মি PQ পরস্পর সমান্তরাল। এখন লেন্সের
মধ্যে প্রতিসৃত রশ্মি QR প্রধান অক্ষ C1C2 কে
O বিন্দুতে ছেদ করেছে, O বিন্দু হলো লেন্সের আলোক কেন্দ্র।
লেন্সটি যদি পাতলা হয় হবে আলোক কেন্দ্র হচ্ছে
লেন্সের মধ্যে অবস্থিত প্রধান অক্ষের উপর এমন একটি বিন্দু যে বিন্দু দিয়ে আলোক
রশ্মি আপতিত হলে দিক পরিবর্তন না করে প্রতিসৃত হয়।
প্রধান ফোকাস : লেন্সের
প্রধান অক্ষের সমান্তরাল এবং নিকটবর্তী রশ্মিগুচ্ছ প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের
উপর যে বিন্দুতে মিলিত হয় (উত্তল লেন্সের ক্ষেত্রে) অথবা যে বিন্দু থেকে অপসৃত
হচ্ছে বলে মনে হয় (অবতল লেন্সের ক্ষেত্রে), সেই বিন্দুকে লেন্সের প্রধান ফোকাস
বলে। ৯.১৩ নং চিত্রে লেন্সের প্রধান ফোকাস F।
ফোকাস দূরত্ব : লেন্সের
আলোক কেন্দ্র থেকে প্রধান ফোকাস পর্যন্ত দূরত্বকে ফোকাস দূরত্ব বলে। ৯.১৩ নং
চিত্রে OF লেন্সের ফোকাস দূরত্ব। ফোকাস দূরত্বকে
দ্বারা
সূচিত করা হয়।

ফোকাস তল : প্রধান
ফোকাসের মধ্য দিয়ে লেন্সের প্রধান অক্ষের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত কল্পিত সমতলকে
লেন্সের ফোকাস তল বলে। ৯.১৪ নং চিত্রে ABCD হচ্ছে ফোকাস তল।
লেন্সে রশ্মি চিত্র অঙ্কনের নিয়মাবলী :
·
১. লেন্সের আলোক কেন্দ্র দিয়ে আপতিত রশ্মি
প্রতিসরণের পর সোজাসুজি চলে যায় (চিত্র ৯.১৫ ক ও খ)
·
২. লেন্সের প্রধান অক্ষের সমান্তরাল রশ্মি
প্রতিসরণের পর প্রধান ফোকাস দিয়ে যায় (উত্তল লেন্সে) [চিত্র ১৫ গ] বা প্রধান
ফোকাস থেকে আসছে বলে মনে হয় (অবতল লেন্সে) [চিত্র ১৫ ঘ)
·
৩. লেন্সের প্রধান ফোকাসের মধ্য দিয়ে (উত্তল
লেন্সে) [চিত্র ১৫ ঙ] বা প্রধান ফোকাস অভিমুখী (অবতল লেন্সে) [চিত্র ১৫ চ] আপতিত
রশ্মি প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরাল হয়ে যায়।
উত্তল লেন্সে প্রতিবিম্ব গঠন :
LOL1 একটি
উত্তল লেন্স। FOF' প্রধান অক্ষ, O আলোক কেন্দ্র, প্রধান F ফোকাস এই লেন্সের প্রধান
অক্ষের উপর PQ একটি বস্তুকে লেন্সটির ফোকাস দূরত্বের চেয়ে বেশি কিন্তু দ্বিগুণ
ফোকাস দূরত্বের কম দূরে খাড়াভাবে রাখা হলো।
এখন P থেকে আগত PR রশ্মি প্রধান অক্ষের সমান্তরালভাবে এসে লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসৃত হওয়ার পর প্রধান ফোকাস F-এর মধ্য দিয়ে RFP1 পথে যায়। P থেকে নির্গত অন্য একটি রশ্মি PO পথে আলোক কেন্দ্র O-তে আপতিত হয়ে সোজাসুজি OP1 বরাবর প্রতিসৃত হলো। RFP1 এবং OP1 রশ্মি দুটি পরস্পর P1 বিন্দুতে ছেদ করে। P1 বিন্দু থেকে অক্ষের উপর P1Q1 লম্বটানা হলো। P1Q1 হলো PQ এর বাস্তব প্রতিবিম্ব। এখানে OQ বস্তুরদূরত্ব এবং OQ1 প্রতিবিম্বের দূরত্ব (চিত্র ৯.১৬)।
এই ক্ষেত্রে প্রতিবিম্ব বাস্তব, উল্টা ও বিবর্ধিত হয়েছে।
এখন P থেকে আগত PR রশ্মি প্রধান অক্ষের সমান্তরালভাবে এসে লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসৃত হওয়ার পর প্রধান ফোকাস F-এর মধ্য দিয়ে RFP1 পথে যায়। P থেকে নির্গত অন্য একটি রশ্মি PO পথে আলোক কেন্দ্র O-তে আপতিত হয়ে সোজাসুজি OP1 বরাবর প্রতিসৃত হলো। RFP1 এবং OP1 রশ্মি দুটি পরস্পর P1 বিন্দুতে ছেদ করে। P1 বিন্দু থেকে অক্ষের উপর P1Q1 লম্বটানা হলো। P1Q1 হলো PQ এর বাস্তব প্রতিবিম্ব। এখানে OQ বস্তুরদূরত্ব এবং OQ1 প্রতিবিম্বের দূরত্ব (চিত্র ৯.১৬)।
এই ক্ষেত্রে প্রতিবিম্ব বাস্তব, উল্টা ও বিবর্ধিত হয়েছে।
লক্ষবস্তুর বিভিন্ন অবস্থানের উপর নির্ভর করে
প্রতিবিম্ব বাস্তব, অবাস্তব; সোজা, উল্টা; বিবর্ধিত, খর্বিত বা আকারে সমান হতে
পারে।
লক্ষবস্তু উত্তল লেন্সের প্রধান ফোকাসের
ভিতরে থাকলে প্রতিবিম্ব অবাস্তব সোজা ও বিবর্ধিত হবে।
অবতল লেন্সে প্রতিবিম্ব গঠন :
ধরা যাক LOL1 একটি
অবতল লেন্স। FOF' এর প্রধান অক্ষ, O আলোক কেন্দ্র, F প্রধান ফোকাস। লেন্সের সামনে
PQ একটি লক্ষবস্তু প্রধান অক্ষের উপর লম্বভাবে অবস্থিত (চিত্র ৯.১৭) চছ এর
প্রতিবিম্ব অঙ্কন করতে হবে।
P বিন্দু থেকে নিঃসৃত একটি আলোক রশ্মি PR
প্রধান অক্ষের সমান্তরাল হয়ে লেন্সে R বিন্দুতে আপতিত হলে প্রতিসরণের পর RM পথে
এমনভাবে প্রতিসরিত হয় যেন রশ্মিটি প্রধান ফোকাস F থেকে আসছে বলে মনে হয়। P থেকে
আর একটি রশ্মি PO আলোক কেন্দ্র দিয়ে লেন্সে আপতিত হয়ে সোজাসুজি PON পথে প্রতিসৃত
হয়। এই প্রতিসৃত রশ্মি দুটি অপসারী বলে মিলিত হয় না। এদেরকে পেছন দিকে বাড়িয়ে
দিলে P1 বিন্দু
থেকে আসছে বলে মনে হয়। সুতরাং P1 বিন্দুই
হচ্ছে P বিন্দুর অবাস্তব প্রতিবিম্ব। এখন P1 থেকে
প্রধান অক্ষের P1Q1 লম্ব
টানলে P1Q1 হবে
PQ লক্ষবস্তুর প্রতিবিম্ব। এই প্রতিবিম্ব অবাস্তব, সোজা এবং আকারে লক্ষবস্তুর
চেয়ে ছোট। অবতল লেন্সে সর্বদা অবাস্তব, সোজা এবং ছোট আকারের প্রতিবিম্ব গঠন করে।
লেন্স চেনার উপায় : লেন্সের
খুব কাছাকাছি কিন্তু পিছনে একটা আঙুল ধরলে যদি এটিকে সোজা এবং আকারে বড় দেখায়
তবে লেন্সটি উত্তল। সোজা এবং আকারে ছোট দেখালে লেন্সটি অবতল। এভাবে লেন্স সনাক্ত
করা যায়।
করে দেখো : তোমার বই এর লেখার কাছাকাছি একটি উত্তল লেন্স ধরো।
লেখাগুলো বড় দেখতে পাচ্ছো কী ? কেন? |
উত্তল লেন্স কর্তৃক প্রতিসরণের পর বিবর্ধিত
প্রতিবিম্ব তোমার চোখে পড়েছে বলে লেখাগুলো বড় দেখাচ্ছে।
মনে করো দু’টি উত্তল লেন্স (চিত্র ৯.১৮)।
প্রথমটির ফোকাস দূরত্ব বেশি এবং দ্বিতীয়টির ফোকাস দূরত্ব কম। এখন যদি একগুচ্ছ
সমান্তরাল
রশ্মি লেন্স দু’টির প্রধান অক্ষের সমান্তরালভাবে
এসে আপতিত হয় তবে তারা লেন্স কর্তৃক প্রতিসৃত হয়ে প্রধান ফোকাসে মিলিত হবে।
প্রথম লেন্সের ক্ষেত্রে ঐ ফোকাস বিন্দু লেন্সের যত দূরে হবে দ্বিতীয় লেন্সের
ক্ষেত্রে তা হবে না বরং কম হবে। উত্তল লেন্সের ক্ষমতা বলতে আমরা বুঝি যে ঐ লেন্স
সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছকে কত বেশি কাছে মিলাতে পারে বা অভিসারী করতে পারে। এক্ষেত্রে
বলা যায় প্রথম লেন্সের ক্ষমতা কম আর দ্বিতীয় লেন্সের ক্ষমতা বেশি। লেন্সের
ক্ষমতা কম হলে ফোকাস দূরত্ব বেশি আর ক্ষমতা বেশি হলে ফোকাস দূরত্ব কম।
৯.১৯ নং চিত্রে অবতল লেন্সে সমান্তরালভাবে আগত আলোক রশ্মিগুচ্ছের প্রতিসরণ দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে যে লেন্স সমান্তরালভাবে আগত আলোক রশ্মিগুচ্ছকে প্রতিসরণের পর যত বেশি ছড়িয়ে দিতে পারে বা অপসারী করতে পারে তার ক্ষমতা তত বেশি। এক্ষেত্রেও লেন্সের ফোকাস দূরত্ব যত কম, ক্ষমতা তত বেশি।
সুতরাং আমরা সাধারণভাবে বলতে পারি কোনো লেন্সের অভিসারী বা অপসারী করার সামর্থকে তার ক্ষমতা বলে।
৯.১৯ নং চিত্রে অবতল লেন্সে সমান্তরালভাবে আগত আলোক রশ্মিগুচ্ছের প্রতিসরণ দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে যে লেন্স সমান্তরালভাবে আগত আলোক রশ্মিগুচ্ছকে প্রতিসরণের পর যত বেশি ছড়িয়ে দিতে পারে বা অপসারী করতে পারে তার ক্ষমতা তত বেশি। এক্ষেত্রেও লেন্সের ফোকাস দূরত্ব যত কম, ক্ষমতা তত বেশি।
সুতরাং আমরা সাধারণভাবে বলতে পারি কোনো লেন্সের অভিসারী বা অপসারী করার সামর্থকে তার ক্ষমতা বলে।
ক্ষমতা P এবং ফোকাস দূরত্ব
এর
মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটি হচ্ছে, 


এক মিটার ফোকাস দূরত্ববিশিষ্ট কোনো লেন্সের
ক্ষমতাকে 1 ডায়াপ্টার বলে। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা চশমার কাচের যে ক্ষমতা লিখে থাকেন তা
ডায়াপ্টার এককে লিখেন।
চিহ্নের প্রথা : সকল
দূরত্ব লেন্সের আলোক কেন্দ্র থেকে পরিমাপ করতে হবে। সকল বাস্তব দূরত্ব ধনাত্মক,
বাস্তব দূরত্ব বলতে আলোকরশ্মি প্রকৃকপক্ষে যে দূরত্ব অতিক্রম করে সেই দূরত্বকে
বুঝায়। সুতরাং সকল বাস্তব লক্ষবস্তু,বাস্তব প্রতিবিম্ব বা বাস্তব ফোকাসের
দূরত্বকে ধনাত্মক ধরা হয়।সকল অবাস্তব দূরত্ব ঋণাত্মক।অবাস্তব লক্ষবস্তু,অবাস্তব
প্রতিবিম্ব ও অবাস্তব ফোকাসের দূরত্বকে অবাস্তব দূরত্ব ধরা হয়।
উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব ধনাত্মক এবং অবতল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব উভয়ই ঋণাত্মক।
গাণিতিক উদাহরণ ৯.৩ : কোনো লেন্সের ফোকাস দূরত্ব +0.1m হলে ক্ষমতা কত?
উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব ধনাত্মক এবং অবতল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব উভয়ই ঋণাত্মক।
গাণিতিক উদাহরণ ৯.৩ : কোনো লেন্সের ফোকাস দূরত্ব +0.1m হলে ক্ষমতা কত?
আমরা জানি,
![]() উ: 10D |
দেওয়া আছে,
ফোকাস দূরত্ব, f= +0.1m ক্ষমতা, P= ? |
লেন্সের
উপর আরো কুইজ
কুইজ ১
কুইজ ১
১. অক্ষিগোলক (Eye-ball) : চোখের
কোটরের মধ্যে অবস্থিত এর গোলাকার অংশকে অক্ষিগোলক বলে। এর সামনে ও পিছনের অংশ
খানিকটা চ্যাপ্টা। এটি চোখের কোটরের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সীমার চারদিকে ঘুরতে
পারে।
২. শ্বেতমণ্ডল (Sclerotic) : এটি শক্ত, সাদা, অস্বচ্ছ তন্তু দিয়ে তৈরি অক্ষিগোলকের বাইরের আবরণ (চিত্র ৯.২০)। এটি চোখের আকৃতি ঠিক রাখে। বাইরের নানা প্রকার অনিষ্ট হতে চোখকে রক্ষা করে।
৩. কর্নিয়া (Cornea) : এটি শ্বেতমণ্ডলের সামনের অংশ। শ্বেতমণ্ডলের এ অংশ স্বচ্ছ এবং বাইরের দিকে কিছুটা উত্তল।
২. শ্বেতমণ্ডল (Sclerotic) : এটি শক্ত, সাদা, অস্বচ্ছ তন্তু দিয়ে তৈরি অক্ষিগোলকের বাইরের আবরণ (চিত্র ৯.২০)। এটি চোখের আকৃতি ঠিক রাখে। বাইরের নানা প্রকার অনিষ্ট হতে চোখকে রক্ষা করে।
৩. কর্নিয়া (Cornea) : এটি শ্বেতমণ্ডলের সামনের অংশ। শ্বেতমণ্ডলের এ অংশ স্বচ্ছ এবং বাইরের দিকে কিছুটা উত্তল।
৪. কৃষ্ণমণ্ডল (Choroid) : শ্বেতমণ্ডলের
ভিতরের গায়ে কালো রঙের একটি আস্তরণ থাকে যাকে কৃষ্ণমণ্ডল বলে। এই কালো আস্তরণের
জন্য চোখের ভিতরে অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন হয় না।
৫. আইরিস (Iris) : কর্নিয়ার ঠিক পিছনে অবস্থিত একটি অস্বচ্ছ পর্দাকে আইরিস বলে। আইরিসের রং বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন রকমের হয়।
সাধারণত এর রং কালো, হালকা নীল বা গাঢ় বাদামী হয়। আইরিস চক্ষু লেন্সের উপর আপতিত আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
৬. চোখের মণি ও তারারন্ধ্র (Pupil) : আইরিসের মাঝখানে একটি ছোট ছিদ্র থাকে। একে চোখের মণি বা তারারন্ধ্র বলে। তারারন্ধ্রের মধ্য দিয়ে আলো চোখের ভিতরে প্রবেশ করে।
৭। চক্ষুলেন্স (Eye Lens) : চোখের মণির ঠিক পিছনে অবস্থিত এটি চোখের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি স্বচ্ছ জৈব পদার্থের তৈরি। লেন্সের পিছনের দিকের বক্রতা সামনের দিকের বক্রতার চেয়ে কিছুটা বেশি। লেন্সটি অক্ষিগোলকের সাথে সিলিয়ারি মাংসপেশি ও সাসপেন্সরি লিগামেন্ট দ্বারা আটকানো থাকে। এই মাংসপেশি ও লিগামেন্টগুলোর সংকোচন ও প্রসারণের ফলে চক্ষু লেন্সের বক্রতা পরিবর্তিত হয় ফলে লেন্সের ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন ঘটে। দূরের বা কাছের জিনিস দেখার জন্য চক্ষু লেন্সের ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়।
৫. আইরিস (Iris) : কর্নিয়ার ঠিক পিছনে অবস্থিত একটি অস্বচ্ছ পর্দাকে আইরিস বলে। আইরিসের রং বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন রকমের হয়।
সাধারণত এর রং কালো, হালকা নীল বা গাঢ় বাদামী হয়। আইরিস চক্ষু লেন্সের উপর আপতিত আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
৬. চোখের মণি ও তারারন্ধ্র (Pupil) : আইরিসের মাঝখানে একটি ছোট ছিদ্র থাকে। একে চোখের মণি বা তারারন্ধ্র বলে। তারারন্ধ্রের মধ্য দিয়ে আলো চোখের ভিতরে প্রবেশ করে।
৭। চক্ষুলেন্স (Eye Lens) : চোখের মণির ঠিক পিছনে অবস্থিত এটি চোখের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি স্বচ্ছ জৈব পদার্থের তৈরি। লেন্সের পিছনের দিকের বক্রতা সামনের দিকের বক্রতার চেয়ে কিছুটা বেশি। লেন্সটি অক্ষিগোলকের সাথে সিলিয়ারি মাংসপেশি ও সাসপেন্সরি লিগামেন্ট দ্বারা আটকানো থাকে। এই মাংসপেশি ও লিগামেন্টগুলোর সংকোচন ও প্রসারণের ফলে চক্ষু লেন্সের বক্রতা পরিবর্তিত হয় ফলে লেন্সের ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন ঘটে। দূরের বা কাছের জিনিস দেখার জন্য চক্ষু লেন্সের ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়।
৮. রেটিনা (Retina) : চক্ষু
লেন্সের পেছনে অবস্থিত অক্ষিগোলকের ভিতরের পৃষ্ঠের গোলাপী রঙের ঈষদচ্ছ আলোক সংবেদন
আবরণকে রেটিনা বলে। এটি রড ও কোন (rods & cones) নামে কতগুলো স্নায়ুতন্তু
দ্বারা তৈরি। এই তন্তুগুলো চক্ষু স্নায়ুর সাথে সংযুক্ত থাকে। রেটিনার উপর আলো
পড়লে তা ঐ স্নায়ুতন্তুতে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি করে ফলে মস্তিষ্কে দর্শনের
অনুভুতি জাগে।
অ্যাকুয়াস হিউমার ও ভিট্রিয়াস হিউমার (Aqueous humour and Vitreous humour) : কর্নিয়া ও চক্ষু লেন্সের মধ্যবর্তী স্থান যে স্বচ্ছ লবণাক্ত জলীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে তাকে অ্যাকুয়াস হিউমার বলে। রেটিনা ও চক্ষু লেন্সের মধ্যবর্তী স্থান যে জেলি জাতীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে তাকে ভিট্রিয়াস হিউমার বলে।
চোখের উপযোজন : একটি উত্তল লেন্সের সামনে ফোকাস দূরত্বের বাইরে কোনো বস্তু রাখলে লেন্সের পিছনে বস্তুটির একটি বাস্তব প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। লেন্সের পিছনে একট পর্দা রাখলে পর্দার উপর বস্তুটির একটি উল্টো প্রতিবিম্ব দেখা যায়। পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে পর্দাটির একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে প্রতিবিম্ব সবচেয়ে পরিষ্কার হয়। একটি বস্তুকে যদি লেন্সের নিকটে আনা হয় বা লেন্স থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে পরিষ্কার প্রতিবিম্ব পাওয়ার জন্য পর্দাটিকে সামনে বা পিছনে সরাতে হয়। এখন আমরা যদি পর্দার পূর্ব অবস্থানে পরিষ্কার বিম্ব পেতে চাই তাহলে ভিন্ন ফোকাস দূরত্বের লেন্স ব্যবহার করতে হবে।
চোখের ক্ষেত্রে ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটে। কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমার, চক্ষু লেন্স ও ভিট্রিয়াস হিউমার একত্রে একটি অভিসারী লেন্সের কাজ করে। চোখের সামনে কোনো বস্তু থাকলে সেই বস্তুর প্রতিবিম্ব যদি রেটিনার উপর পড়ে তাহলে মস্তিষ্কের দর্শনের অনুভূতি জাগে এবং আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই। আমরা চোখের সাহায্যে বিভিন্ন দূরত্বের বস্তু দেখি। চোখের লেন্সের একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে এর আকৃতি প্রয়োজন মতো বদলে যায় ফলে ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন ঘটে। ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তনের ফলে লক্ষবস্তুর যে কোনো অবস্থানের জন্য লেন্স থেকে একই দূরত্বে অর্থাৎ, রেটিনার উপর স্পষ্ট বিম্ব গঠিত হয়। যে কোনো দূরত্বের বস্তু দেখার জন্য চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করার এই ক্ষমতাকে চোখের উপযোজন বলে।
স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব : আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পাই যে কোনো বস্তুকে চোখের যত নিকটে নিয়ে আসা যায় বস্তুটিও তত স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু কাছে আনতে আনতে এমন একটা দূরত্ব আসে যখন আর বস্তুটি খুব স্পষ্ট দেখা যায় না। যে ন্যূনতম দূরত্ব পর্যন্ত চোখ বিনা শ্রান্তিতে স্পষ্ট দেখতে পায় তাকে স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব বলে। স্বাভাবিক চোখের জন্য স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার। চোখ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার দূরবর্তী বিন্দুকে চোখের নিকট বিন্দু বলে। কোনো বস্তু ২৫ সেন্টিমিটারের কম দূরত্বে থাকলে তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না।
সবচেয়ে বেশি যে দূরত্বে কোনো বস্তু থাকলে তা স্পষ্ট দেখা যায় তাকে চোখের দূরবিন্দুও বলে। স্বাভাবিক চোখের জন্য দূরবিন্দু অসীম দূরত্বে অবিস্থত হয়। অর্থাৎ স্বাভাবিক চোখ বহুদূর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পায়।
দর্শনানুভূতির স্থায়িত্বকাল : চোখের সামনে কোনো বস্তু রাখলে রেটিনায় তার প্রতিবিম্ব গঠিত হয় এবং আমরা বস্তুটি দেখতে পাই। এখন যদি বস্তুটিকে চোখের সম্মুখ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে সরিয়ে নেওয়ার ০.১ সেকেন্ড পর্যন্ত এর অনুভূতি মস্তিষ্কে থেকে যায়। এই সময়কে দর্শনানুভুতির স্থায়িত্বকাল বলে।
অ্যাকুয়াস হিউমার ও ভিট্রিয়াস হিউমার (Aqueous humour and Vitreous humour) : কর্নিয়া ও চক্ষু লেন্সের মধ্যবর্তী স্থান যে স্বচ্ছ লবণাক্ত জলীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে তাকে অ্যাকুয়াস হিউমার বলে। রেটিনা ও চক্ষু লেন্সের মধ্যবর্তী স্থান যে জেলি জাতীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে তাকে ভিট্রিয়াস হিউমার বলে।
চোখের উপযোজন : একটি উত্তল লেন্সের সামনে ফোকাস দূরত্বের বাইরে কোনো বস্তু রাখলে লেন্সের পিছনে বস্তুটির একটি বাস্তব প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। লেন্সের পিছনে একট পর্দা রাখলে পর্দার উপর বস্তুটির একটি উল্টো প্রতিবিম্ব দেখা যায়। পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে পর্দাটির একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে প্রতিবিম্ব সবচেয়ে পরিষ্কার হয়। একটি বস্তুকে যদি লেন্সের নিকটে আনা হয় বা লেন্স থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে পরিষ্কার প্রতিবিম্ব পাওয়ার জন্য পর্দাটিকে সামনে বা পিছনে সরাতে হয়। এখন আমরা যদি পর্দার পূর্ব অবস্থানে পরিষ্কার বিম্ব পেতে চাই তাহলে ভিন্ন ফোকাস দূরত্বের লেন্স ব্যবহার করতে হবে।
চোখের ক্ষেত্রে ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটে। কর্নিয়া, অ্যাকুয়াস হিউমার, চক্ষু লেন্স ও ভিট্রিয়াস হিউমার একত্রে একটি অভিসারী লেন্সের কাজ করে। চোখের সামনে কোনো বস্তু থাকলে সেই বস্তুর প্রতিবিম্ব যদি রেটিনার উপর পড়ে তাহলে মস্তিষ্কের দর্শনের অনুভূতি জাগে এবং আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই। আমরা চোখের সাহায্যে বিভিন্ন দূরত্বের বস্তু দেখি। চোখের লেন্সের একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে এর আকৃতি প্রয়োজন মতো বদলে যায় ফলে ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন ঘটে। ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তনের ফলে লক্ষবস্তুর যে কোনো অবস্থানের জন্য লেন্স থেকে একই দূরত্বে অর্থাৎ, রেটিনার উপর স্পষ্ট বিম্ব গঠিত হয়। যে কোনো দূরত্বের বস্তু দেখার জন্য চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করার এই ক্ষমতাকে চোখের উপযোজন বলে।
স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব : আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পাই যে কোনো বস্তুকে চোখের যত নিকটে নিয়ে আসা যায় বস্তুটিও তত স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু কাছে আনতে আনতে এমন একটা দূরত্ব আসে যখন আর বস্তুটি খুব স্পষ্ট দেখা যায় না। যে ন্যূনতম দূরত্ব পর্যন্ত চোখ বিনা শ্রান্তিতে স্পষ্ট দেখতে পায় তাকে স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব বলে। স্বাভাবিক চোখের জন্য স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার। চোখ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার দূরবর্তী বিন্দুকে চোখের নিকট বিন্দু বলে। কোনো বস্তু ২৫ সেন্টিমিটারের কম দূরত্বে থাকলে তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না।
সবচেয়ে বেশি যে দূরত্বে কোনো বস্তু থাকলে তা স্পষ্ট দেখা যায় তাকে চোখের দূরবিন্দুও বলে। স্বাভাবিক চোখের জন্য দূরবিন্দু অসীম দূরত্বে অবিস্থত হয়। অর্থাৎ স্বাভাবিক চোখ বহুদূর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পায়।
দর্শনানুভূতির স্থায়িত্বকাল : চোখের সামনে কোনো বস্তু রাখলে রেটিনায় তার প্রতিবিম্ব গঠিত হয় এবং আমরা বস্তুটি দেখতে পাই। এখন যদি বস্তুটিকে চোখের সম্মুখ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে সরিয়ে নেওয়ার ০.১ সেকেন্ড পর্যন্ত এর অনুভূতি মস্তিষ্কে থেকে যায়। এই সময়কে দর্শনানুভুতির স্থায়িত্বকাল বলে।
দু’টি চোখ থাকার সুবিধা : দু’টি
চোখ দিয়ে একটি বস্তু দেখলে আমরা কেবলমাত্র একটি বস্তুই দেখতে পাই। যদিও
প্রত্যেকটি চোখ আপন আপন রেটিনায় প্রতিবিম্ব গঠন করে, কিন্তু মস্তিষ্ক দুটি ভিন্ন
প্রতিবিম্বকে একটি প্রতিবিম্বে পরিণত করে। দুটি চোখ থাকার জন্য দূরত্ব নির্ভুলভাবে
পরিমাপ করা যায়। তাই একটি চোখ বন্ধ রেখে সুইয়ে সুতা পরাতে খুবই অসুবিধা হয়।
তাছাড়া বস্তুর তুলনায় দুটি চোখের বিভিন্ন অবস্থানের জন্য ডান চোখ ডান দিকটা বেশি
এবং বাম চোখ বাম দিকটা বেশি দেখে। দুই চোখ দিয়ে বস্তু দেখলে দু’টি ভিন্ন
প্রতিবিম্বের উপরিপাত ঘটবে এবং বস্তুকে ভালোভাবে দেখা যাবে।
পূর্বেই আমরা জেনেছি যে,আমাদের চোখের মণির
ঠিক পিছনে একটি করে উত্তল লেন্স আছে যার নাম চক্ষু লেন্স। দূরের বা কাছের জিনিস
দেখার জন্য চক্ষু লেন্সের ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়।
চিত্রে চক্ষু লেন্স দেখানো হয়েছে। চোখের
সামনে তথা লেন্সের সামনে PQ একটি বস্তু। বস্তুটির P বিন্দু থেকে একটি আলোকরশ্মি
PR, প্রধান অক্ষের সমান্তরালে যেয়ে লেন্সের R বিন্দুতে আপতিত হলো। লেন্সে
প্রতিসরণের পর তা RFP1 পথে
গেল। P থেকে আর একটি আলোকরশ্মি PO পথে লেন্সের আলোককেন্দ্র আপতিত হয়ে সোজাসুজি OP1 বরাবর
প্রতিসৃত হলো। RP1 এবং OP1 প্রতিসৃত
রশ্মি দুটি P1 বিন্দুতে
মিলিত হলো। এবার প্রধান অক্ষের উপর P1Q1 লম¦
আঁকলে P1Q1 হবে
PQ হবে বাস্তব ও উলটা প্রতিবিম্ব।
প্রতিবি¤বটি যেখানে গঠিত হলো তা হলো চোখের রেটিনা। এটি রড ও কোণ (rods and cones) নামে কতগুলো আলোক সংবেদনশীল কোষ তথা স্নায়ুতন্তু দ্বারা তৈরি। রেটিনার উপর বিম্ব বা আলো পড়লে তা ঐ স্নায়ুতন্তুতে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি করে ফলে মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভূতি জাগে এবং আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই।
উল্লেখ্য যে রেটিনার উপর বস্তুর উল্টো প্রতিবিম্ব পড়ে। এই অনুভূতি চক্ষু নার্ভের সাহায্যে মস্তিষ্কে চলে যায়। রেটিনায় গঠিত বস্তুর প্রতিবিম্ব উল্টো হলেও মস্তিষ্কের বিশেষ প্রক্রিয়ার জন্য আমরা বস্তুকে সোজা দেখি।
প্রতিবি¤বটি যেখানে গঠিত হলো তা হলো চোখের রেটিনা। এটি রড ও কোণ (rods and cones) নামে কতগুলো আলোক সংবেদনশীল কোষ তথা স্নায়ুতন্তু দ্বারা তৈরি। রেটিনার উপর বিম্ব বা আলো পড়লে তা ঐ স্নায়ুতন্তুতে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি করে ফলে মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভূতি জাগে এবং আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই।
উল্লেখ্য যে রেটিনার উপর বস্তুর উল্টো প্রতিবিম্ব পড়ে। এই অনুভূতি চক্ষু নার্ভের সাহায্যে মস্তিষ্কে চলে যায়। রেটিনায় গঠিত বস্তুর প্রতিবিম্ব উল্টো হলেও মস্তিষ্কের বিশেষ প্রক্রিয়ার জন্য আমরা বস্তুকে সোজা দেখি।
স্বাভাবিক চোখের দৃষ্টির পাল্লা 25cm থেকে
অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত অর্থাৎ, স্বাভাবিক চোখ 25cm থেকে অসীম দূরত্বের মধ্যে যে
কোনো বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায়। যদি কোনো চোখ এই পাল্লার মধ্যে কোনো বস্তুকে স্পষ্ট
দেখতে না পায় তাহলে সেই চোখ ত্রুটিপূর্ণ বলে ধরা হয়। চোখে প্রধানত দুই ধরনের
ত্রুটি দেখা যায়। যথা-
১. হ্রস্ব দৃষ্টি (Short sight or Myopia)
২. দীর্ঘ দৃষ্টি (Long sight or Hypermetropia)
১. হ্রস্ব দৃষ্টি: এই ত্রুটিগ্রস্ত চোখ দূরের জিনিস ভালোভাবে দেখতে পায় না কিন্তু কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায়। এমনকি এই চোখের নিকট বিন্দু 25cm এরও কম হয়। সুতরাং চোখের নিকটবিন্দু 25cm এরও কম হলে সেটাও হ্রস্ব দৃষ্টি।
২. দীর্ঘ দৃষ্টি (Long sight or Hypermetropia)
১. হ্রস্ব দৃষ্টি: এই ত্রুটিগ্রস্ত চোখ দূরের জিনিস ভালোভাবে দেখতে পায় না কিন্তু কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায়। এমনকি এই চোখের নিকট বিন্দু 25cm এরও কম হয়। সুতরাং চোখের নিকটবিন্দু 25cm এরও কম হলে সেটাও হ্রস্ব দৃষ্টি।
কারণ : অক্ষিগোলকের
ব্যাসার্ধ বেড়ে গেলে বা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব কমে গেলে অর্থাৎ, অভিসারী
ক্ষমতা বেড়ে গেলে এই ত্রুটি দেখা দেয় [৯.২২ (ক)]।
ত্রুটির ফল : এক্ষেত্রে অনেক দূরবর্তী বস্তু থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ চোখের লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে রেটিনার সামনে I বিন্দুতে মিলিত হয় [চিত্র ৯.২২ (ক)] ফলে লক্ষবস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না। এই চোখের দূরবিন্দু অসীমের পরিবর্তে F বিন্দুতে হয় তাই এই চোখ F এর বেশি দূরের কোনো বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় না [চিত্র ৯.২২ (খ)]
প্রতিকার : চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা বেড়ে যাবার জন্য এই ত্রুটির উদ্ভব হয়। দৃষ্টির এ ত্রুটি সংশোধন করার জন্য সহায়ক লেন্স বা চশমা হিসেবে অবতল লেন্স ব্যবহার করা হয় চিত্র ৯.২২ (গ)।
তাছাড়া একমাত্র অবতল লেন্সই লক্ষবস্তুর চেয়েও নিকটে সোজা ও অবাস্তব প্রতিবিম্ব গঠন করে বলে এক্ষেত্রে চোখের লেন্সের সামনে সহায়ক লেন্স বা চশমা হিসেবে অবতল লেন্স ব্যবহার করতে হবে। এই লেন্সেটির ক্ষমতা তথা ফোকাস
ত্রুটির ফল : এক্ষেত্রে অনেক দূরবর্তী বস্তু থেকে আগত সমান্তরাল রশ্মিগুচ্ছ চোখের লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে রেটিনার সামনে I বিন্দুতে মিলিত হয় [চিত্র ৯.২২ (ক)] ফলে লক্ষবস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না। এই চোখের দূরবিন্দু অসীমের পরিবর্তে F বিন্দুতে হয় তাই এই চোখ F এর বেশি দূরের কোনো বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় না [চিত্র ৯.২২ (খ)]
প্রতিকার : চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা বেড়ে যাবার জন্য এই ত্রুটির উদ্ভব হয়। দৃষ্টির এ ত্রুটি সংশোধন করার জন্য সহায়ক লেন্স বা চশমা হিসেবে অবতল লেন্স ব্যবহার করা হয় চিত্র ৯.২২ (গ)।
তাছাড়া একমাত্র অবতল লেন্সই লক্ষবস্তুর চেয়েও নিকটে সোজা ও অবাস্তব প্রতিবিম্ব গঠন করে বলে এক্ষেত্রে চোখের লেন্সের সামনে সহায়ক লেন্স বা চশমা হিসেবে অবতল লেন্স ব্যবহার করতে হবে। এই লেন্সেটির ক্ষমতা তথা ফোকাস
দূরত্ব এমন হবে যা অসীম দূরত্বে অবস্থিত
লক্ষবস্তুর প্রতিবিম্ব ত্রুটিপূর্ণ চোখের দূরবিন্দুতে গঠন করে [চিত্র ৯.২২ (গ)]।
আমরা জানি অসীম দূরত্বে অবস্থিত লক্ষবস্তুর প্রতিবিম্ব ফোকাসে গঠিত হয়। সুতরাং
অবতল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব ত্রুটিপূর্ণ চোখের দূরবিন্দুর দূরত্বের সমান হতে হবে।
২. দীর্ঘদৃষ্টি : এই ত্রুটিগ্রস্ত চোখ দূরের জিনিস দেখতে পায় কিন্তু কাছের জিনিস স্পস্ট দেখতে পায় না। বা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বেড়ে গেলে অর্থাৎ, অভিসারী ক্ষমতা কমে গেলে চোখে এ ধরনের ত্রুটি দেখা দেয় [চিত্র ৯.২৩ (ক)]। ত্রুটির ফল: এক্ষেত্রে চোখের সামনে লক্ষবস্তু থেকে আগত আলোক রশ্মিগুচ্ছ চোখের লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে রেটিনার পেছনে I বিন্দুতে মিলিত হয় [চিত্র ৯.২৩ (ক)]। ফলে লক্ষবস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না। [এই চোখের নিকট বিন্দু N থেকে দূরে সরে O বিন্দুতে চলে যায় যা 25cm চেয়ে অনেক বেশি। তাই এ চোখে O-এর চেয়ে নিকটবতী স্থানের বস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না [চিত্র ৯.২৪ (খ)]।
২. দীর্ঘদৃষ্টি : এই ত্রুটিগ্রস্ত চোখ দূরের জিনিস দেখতে পায় কিন্তু কাছের জিনিস স্পস্ট দেখতে পায় না। বা চোখের লেন্সের ফোকাস দূরত্ব বেড়ে গেলে অর্থাৎ, অভিসারী ক্ষমতা কমে গেলে চোখে এ ধরনের ত্রুটি দেখা দেয় [চিত্র ৯.২৩ (ক)]। ত্রুটির ফল: এক্ষেত্রে চোখের সামনে লক্ষবস্তু থেকে আগত আলোক রশ্মিগুচ্ছ চোখের লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে রেটিনার পেছনে I বিন্দুতে মিলিত হয় [চিত্র ৯.২৩ (ক)]। ফলে লক্ষবস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না। [এই চোখের নিকট বিন্দু N থেকে দূরে সরে O বিন্দুতে চলে যায় যা 25cm চেয়ে অনেক বেশি। তাই এ চোখে O-এর চেয়ে নিকটবতী স্থানের বস্তু স্পষ্ট দেখা যায় না [চিত্র ৯.২৪ (খ)]।
প্রতিকার : চোখের
লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা কমে যাওয়ার দরুন এ ত্রুটির উদ্ভব হয়। তাই এ ত্রুটি দূর
(চিত্র ৯.২৩) করতে চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা বাড়াতে হয়। এ জন্যে সহায়ক
লেন্স হিসেবে উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া একমাত্র উত্তল লেন্সই
লক্ষবস্তুর চেয়েও দূরে সোজা অবাস্তব প্রতিবিম্ব গঠন করে। এক্ষেত্রে তাই চোখের
লেন্সের সামনে সহায়ক লেন্স বা চশমা হিসেবে এমন ক্ষমতা তথা ফোকাস দূরত্ববিশিষ্ট
উত্তল লেন্স ব্যবহার করতে হবে যা স্বাভাবিক চোখের নিকট বিন্দু N-এ স্থাপিত লক্ষবস্তুর
বিম্ব ত্রুটিপূর্ণ চোখের নিকট বিন্দু O-তে গঠন করে [চিত্র ৯.২৩ (গ)]।
আমরা যখন কোনো বস্তু দেখি তখন বস্তু থেকে আলো
এসে আমাদের চোখে পড়ে। চক্ষু লেন্স কর্তৃক উক্ত আলো প্রতিসরিত হয়ে বস্তুর একটি
প্রতিবিম্ব রেটিনায় গঠন করে। রেটিনায় বহুসংখ্যক স্নায়ু থাকে যারা এই অনুভুতি
মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। মস্তিষ্কে নিখুঁত বিশ্লেষণের পর আমরা সেই বস্তুকে দেখতে
পাই। রেটিনা থেকে যে নার্ভগুলো মস্তিষ্কে গিয়েছে সেগুলোর নাম রড ও কোণ (rods and
cones)। এদের মধ্যে কোণগুলো বর্ণ সংবেদনশীল (colour sensitive)। তিন ধরণের কোণ আছে
নীলবর্ণ সংবেদনশীল কোণ, লাল বর্ণ সংবেদনশীল কোণ এবং সবুজ বর্ণ সংবেদনশীল কোণ। কোনো
বর্ণ যতই মিশ্র বা জটিল হোক না কেন চোখ সকল বর্ণকে মাত্র এই তিনটি বর্ণে ধারণ করে।
রেটিনার কোণগুলো এই ধারণকৃত তথ্য মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। মস্তিষ্ক আবার বিশেষ
প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকল বর্ণকে আলাদা করে দেয়। এভাবেই আমরা রঙিন বস্তুর আলোকীয়
উপলব্ধি পাই।
আমাদের চোখে একটি উত্তল লেন্স আছে। যখন আমরা
কোনো বস্তু দেখি তখন আলো ঐ বস্তু থেকে এসে চোখের লেন্স কর্তৃক প্রতিসৃত হয়ে
রেটিনার উপর পড়ে। রেটিনায় ঐ বস্তুর একটি বাস্তব ও উল্টা প্রতিবিম্ব গঠন করার পর
আমরা বস্তুকে দেখতে পাই। সুতরাং আমাদেরকে দেখার কাজে সাহায্য করছে আলোর প্রতিসরণ।
অনেকের চোখে দৃষ্টির ত্রুটি আছে। কেউ হয়তো কাছের বস্তু দেখে না কেউ আবার দূরেরটা দেখে না। এসব ত্রুটি দূর করার জন্য আমরা নির্দিষ্ট ক্ষমতার লেন্স দ্বারা তৈরি চশমা ব্যবহার করি। চশমার মধ্য দিয়ে আগত আলোক রশ্মি প্রতিসৃত হয়ে চোখে পড়ে এবং বস্তু সঠিকভাবে দেখতে সহায়তা করে। সুতরাং দৃষ্টির ত্রুটি দূর করতে আলোর প্রতিসরণ কাজ করে।
আমরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলি, মাইক্রোস্কোপ দিয়ে অতিক্ষুদ্র জিনিস বড় করে দেখি, টেলিস্কোপ দিয়ে দূরের জিনিস কাছে দেখি এসব যন্ত্রেই আলোর প্রতিসরণ ধর্মকে ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ও টেলিকমিউনিকেশনে আমরা যে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে থাকি তাও আলোর প্রতিসরণ ধর্মের অবদান। আমাদের অনেকের ঘরে মাছের এ্যাকুরিয়াম আছে। এখানে কিছু রঙিন মাছ রাখলে তাদের মজার গতিবিধি দেখা যায়। মাছ থেকে প্রথমে আলো পানির মধ্য দিয়ে এসে কাচের বাক্সে আপতিত হয়। কাচে প্রতিসরণের পর আমাদের চোখে সেই দৃশ্য আসে। সুতরাং এখানেও প্রতিসরণের অবদান রয়েছে।
অনেকের চোখে দৃষ্টির ত্রুটি আছে। কেউ হয়তো কাছের বস্তু দেখে না কেউ আবার দূরেরটা দেখে না। এসব ত্রুটি দূর করার জন্য আমরা নির্দিষ্ট ক্ষমতার লেন্স দ্বারা তৈরি চশমা ব্যবহার করি। চশমার মধ্য দিয়ে আগত আলোক রশ্মি প্রতিসৃত হয়ে চোখে পড়ে এবং বস্তু সঠিকভাবে দেখতে সহায়তা করে। সুতরাং দৃষ্টির ত্রুটি দূর করতে আলোর প্রতিসরণ কাজ করে।
আমরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলি, মাইক্রোস্কোপ দিয়ে অতিক্ষুদ্র জিনিস বড় করে দেখি, টেলিস্কোপ দিয়ে দূরের জিনিস কাছে দেখি এসব যন্ত্রেই আলোর প্রতিসরণ ধর্মকে ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ও টেলিকমিউনিকেশনে আমরা যে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে থাকি তাও আলোর প্রতিসরণ ধর্মের অবদান। আমাদের অনেকের ঘরে মাছের এ্যাকুরিয়াম আছে। এখানে কিছু রঙিন মাছ রাখলে তাদের মজার গতিবিধি দেখা যায়। মাছ থেকে প্রথমে আলো পানির মধ্য দিয়ে এসে কাচের বাক্সে আপতিত হয়। কাচে প্রতিসরণের পর আমাদের চোখে সেই দৃশ্য আসে। সুতরাং এখানেও প্রতিসরণের অবদান রয়েছে।
উত্তল লেন্স ব্যবহার করে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি ও
প্রদর্শন
উদ্দেশ্য : ল্যাবরেটরিতে উত্তল লেন্স ব্যবহার এবং বাস্তব প্রতিবিম্ব সৃষ্টি।
যন্ত্রপাতি : একটি উত্তল লেন্স।
কাজের ধারা :
১. একটি উত্তল লেন্স নাও।
২. লেন্সটি নিয়ে তোমার ল্যাবরেটরির দরজা অথবা জানালার নিকট দাঁড়াও।
৩. এবার লেন্সটিকে বাহিরের কোনো দৃশ্য যেমন-গাছপালা, দালান ইত্যাদির দিকে ধরো।
৪. লেন্সটিকে ডানে বামে নড়াচড়া করে লেন্সের পেছনের রাখা সাদা কাগজের উপর ঐ দৃশ্যের প্রতিবিম্ব তৈরি কর।
৫. প্রতিবিম্বটিকে স্পষ্ট করার জন্য লেন্সটিকে কাগজ হতে সামনে বা পিছনে সরাও।
৬. কোনো একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে তুমি বস্তুর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব কাগজে দেখতে পাবে।
৭. এভাবে দূরের বস্তুর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব দেয়ালে প্রদর্শন করা যায়।
৮. প্রতিবিম্বের গঠন আলোচনা কর।
উদ্দেশ্য : ল্যাবরেটরিতে উত্তল লেন্স ব্যবহার এবং বাস্তব প্রতিবিম্ব সৃষ্টি।
যন্ত্রপাতি : একটি উত্তল লেন্স।
কাজের ধারা :
১. একটি উত্তল লেন্স নাও।
২. লেন্সটি নিয়ে তোমার ল্যাবরেটরির দরজা অথবা জানালার নিকট দাঁড়াও।
৩. এবার লেন্সটিকে বাহিরের কোনো দৃশ্য যেমন-গাছপালা, দালান ইত্যাদির দিকে ধরো।
৪. লেন্সটিকে ডানে বামে নড়াচড়া করে লেন্সের পেছনের রাখা সাদা কাগজের উপর ঐ দৃশ্যের প্রতিবিম্ব তৈরি কর।
৫. প্রতিবিম্বটিকে স্পষ্ট করার জন্য লেন্সটিকে কাগজ হতে সামনে বা পিছনে সরাও।
৬. কোনো একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে তুমি বস্তুর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব কাগজে দেখতে পাবে।
৭. এভাবে দূরের বস্তুর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব দেয়ালে প্রদর্শন করা যায়।
৮. প্রতিবিম্বের গঠন আলোচনা কর।
বিভিন্ন ব্যক্তির চোখের স্পষ্ট দর্শনের
ন্যূনতম দূরত্ব নির্ণয় ও ব্যবহারযোগ্য চশমা সনাক্তকরণ
উদ্দেশ্য : স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব পরিমাপ করে চোখের ত্র“টি চিহ্নিত কর ও ব্যবহারযোগ্য চশমা সনাক্ত করা।
উপকরণ : খবরের কাগজ অথবা বই।
কাজের ধারা :
উদ্দেশ্য : স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব পরিমাপ করে চোখের ত্র“টি চিহ্নিত কর ও ব্যবহারযোগ্য চশমা সনাক্ত করা।
উপকরণ : খবরের কাগজ অথবা বই।
কাজের ধারা :
·
১. তোমার শিক্ষক, সহপাঠী, মা-বাবা, বড়
ভাই-বোনদের মধ্য থেকে চশমা ব্যবহার করে না এমন পাঁচজনকে বাছাই কর।
·
২. বাছাইকরা একজনকে খবরের কাগজটি পড়তে দাও।
·
৩. তিনি খবরের কাগজটি চোখ থেকে যে অবস্থানে
রেখে ভালোভাবে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সে অবস্থানটি চিহ্নিত কর।
·
৪. এবার একটি সেন্টিমিটার স্কেল ব্যবহার করে
চোখ থেকে খবরের কাগজের অবস্থান পরিমাপ কর। এটাই তার স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম
দূরত্ব।
·
৫. এইভাবে পাঁচজন ব্যক্তিরই স্পষ্ট দর্শনের
ন্যূনতম দূরত্ব পরিমাপ করে ছকে লিখ।
·
৬. ছক থেকে প্রত্যেকের স্পষ্ট দর্শনের
ন্যূনতম দূরত্ব যাচাই (25cm এর কম বা বেশি হলে) করে প্রয়োজনীয় চশমা সুপারিশ করতে
পার।
·
৭. ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির আলাদা স্পষ্ট
দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব হওয়ার কারণ আলোচনা কর।
পর্যবেক্ষণ ছক
No comments:
Post a Comment