তড়িতের চৌম্বক ক্রিয়া
সূচিপত্র
ভৌত রাশি ও পরিমাপ
গতি
বল
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
পদার্থের অবস্থা ও চাপ
বস্তুর উপর তাপের প্রভাব
তরঙ্গ ও শব্দ
আলোর প্রতিফলন
আলোর প্রতিসরণ
দশম অধ্যায় স্থিরতড়িৎ
একাদশ অধ্যায় চল তড়িৎ
তড়িতের চৌম্বক ক্রিয়া
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স
জীবন বাঁচাতে পদার্থবিজ্ঞান
সূত্রাবলি
গতি
বল
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
পদার্থের অবস্থা ও চাপ
বস্তুর উপর তাপের প্রভাব
তরঙ্গ ও শব্দ
আলোর প্রতিফলন
আলোর প্রতিসরণ
দশম অধ্যায় স্থিরতড়িৎ
একাদশ অধ্যায় চল তড়িৎ
তড়িতের চৌম্বক ক্রিয়া
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স
জীবন বাঁচাতে পদার্থবিজ্ঞান
সূত্রাবলি
তড়িতের চৌম্বক প্রভাব যেমন আছে তেমনি
চুম্বকের তড়িৎ প্রভাব আছে। এই দুই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অনেক তড়িৎ যন্ত্রপাতি
তৈরি করা হয়েছে। এই সব যন্ত্রপাতি আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করেছে, জীবনে অনেক
আরাম আয়েস এনে দিয়েছে, আমাদের জীবনমান উন্নত করেছে। এই অধ্যায়ে আমরা
তাড়িতচুম্বক,তাড়িতচৌম্বক আবেশ, আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহ ও আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি,
তড়িৎ মোটর, জেনারেটর, ট্র্যান্সফর্মার ইত্যাদির কার্যপ্রণালি ও ব্যবহার নিয়ে
আলোচনা করব।
Contents
সলিনয়েডের ভিতর কোনো লোহার দণ্ড বা পেরেককে
ঢুকালে সলিনয়েডের নিজের যে চৌম্বকক্ষেত্র হয়েছে তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী
চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করে ফলে সলিনয়েড থেকে বেশি চৌম্বকক্ষেত্র পাওয়া যায়। তড়িৎ
প্রবাহ চলাকালীন এটি বেশ শক্তিশালী চুম্বকে পরিণত হয়। একে বলা হয় তাড়িতচুম্বক।
এই চুম্বকের প্রাবল্য নিম্নোক্তভাবে আরও বাড়ানো যায়
·
তড়িৎ প্রবাহ বাড়িয়ে
·
সলিনয়েডের পেঁচের সংখ্যা বাড়িয়ে
·
ইংরেজি U অক্ষরের মতো বাঁকিয়ে চুম্বক মেরু
দুটিকে আরও কাছাকাছি এনে।
বিভিন্ন তড়িৎ প্রবাহের ফলে বা সলিনয়েডের
পেঁচের সংখ্যা বাঁড়ালে সলিনয়েড দ্বারা চুম্বকায়িত দণ্ড বা পেরেকটি কী পরিমাণ
আলপিন বা পেপার ক্লিপ আকর্ষণ করতে পারে তা তোমাদের শিক্ষককের সাহায্য নিয়ে
পরীক্ষা করে দেখ। বৈদ্যুতিক ঘণ্টা তৈরি, লোহা বা ইস্পাতের ভারী জিনিস উঠানামা করা
বা আবর্জনা সরানোর ক্রেন তৈরিতে তাড়িতচুম্বক ব্যবহার করা হয়। চোখের ভিতর লোহা বা
ইস্পাতের গুঁড়া ঢুকলে তা বের করার কাজে এই চুম্বক ব্যবহার কর হয় এছাড়া
টেলিফোনের ইয়ারপিস ও দরজার তাড়িতচৌম্বক তালায় তাড়িতচুম্বক ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞানী ওয়েরস্টেডের তড়িতের চৌম্বক
ক্রিয়া আবিষ্কারের পর অনেক বিজ্ঞানী চেষ্টা করতে থাকেন চৌম্বকক্ষেত্র থেকে তড়িৎ
প্রবাহ সৃষ্টি করা যায় কি-না। এই নিয়ে যারা কাজ করছিলেন তাদের মধ্যে ইংল্যাণ্ডের
মাইকেল ফ্যারাডে, আমেরিকায় জোসেফ হেনরি এবং রাশিয়াতে এইচ.এফ.ই.লেঞ্জ তিনজনই পৃথক
পৃথকভাবে সাফল্য লাভ করেন। কিন্তু ১৮৩১ সালে মাইকেল ফ্যারাডে তাঁর পরীক্ষালব্ধ
ফলাফল প্রথম প্রকাশ করেন। তিনি দেখান যে, একটি পরিবর্তনশীল চৌম্বকক্ষেত্র
তড়িচ্চালকশক্তি সৃষ্টি করতে পারে যা একটি আবদ্ধ বর্তনী দিয়ে একটি আবিষ্ট
তড়িৎপ্রবাহ চালাতে পারে।পরিবর্তনশীল চৌম্বকক্ষেত্রের দ্বারা কোনো বর্তনীতে
তড়িচ্চালকশক্তি বা তড়িত প্রবাহ সৃষ্টির ঘটনাকে তাড়িতচৌম্বক
আবেশ বলে। তাড়িতচৌম্বক আবেশ
আবিষ্কারের জন্য ফ্যারাডে দুইটি পরীক্ষা করেছিলেন। পরীক্ষাগুলো
তোমরাও করতে পার।
পরীক্ষা-১ : কার্ড
বোর্ডের একটি চোঙের গায়ে অন্তরীত তার পেঁচিয়ে একটি কুণ্ডলী তৈরি কর। এই
কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহের উপস্থিতি বোঝার জন্য এর দুই প্রান্তের সাথে একটি
গ্যালভানোমিটার যুক্ত কর। সংযোগ দেওয়ার সময় তারের প্রান্তের অপরিবাহী আবরণ খুলে
ফেলতে হবে।এখন একটি দণ্ড চুম্বকের দক্ষিণ মেরুকে দ্রুত চোঙের ভিতর ঢুকাও। কী ঘটছে?
অর্থাৎ কুণ্ডলী দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলছে। গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিক্ষেপ ঘটছে।
এবার চুম্বকটি বের করে নাও। কী ঘটছে? চুম্বক প্রবেশ করানোর সময় গ্যালভানোমিটারের
কাঁটার বিক্ষেপ যে দিকে হয়েছিল চুম্বককে বের করানোর সময় বিক্ষেপ হয়েছে তার
বিপরীত দিকে। চুম্বকটিকে স্থির রেখে এবার যদি গ্যালভানোমিটারসহ কুণ্ডলীটিকে
চুম্বকের দিকে দ্রুত নেওয়া হয় তাহলেও গ্যালভানোমিটারে ক্ষণিক বিক্ষেপ দেখা যাবে।
কুণ্ডলীটিকে চুম্বক থেকে দূরে সরিয়ে নিলে বিক্ষেপ বিপরীত দিকে দেখা যাবে।
পরীক্ষা-২ : এই পরীক্ষার জন্য অন্তরীত তামার তারের দু’টি বন্ধ কুণ্ডলী নিতে হবে। প্রথম কুণ্ডলীতে শুধু একটি গ্যালভানোমিটার সংযুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় কুণ্ডলীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তির উৎসরূপে একটি ব্যাটারি, একটি পরিবর্তনশীল রোধ ও একটি টেপা চাবি সংযুক্ত করতে হবে [চিত্র ১২.৫ ক)। যে কুণ্ডলীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তির উৎস সংযুক্ত তাকে মুখ্য কুণ্ডলী বলে। আর যে কুণ্ডলীতে গ্যালভানোমিটার সংযুক্ত সেটি গৌণ কুণ্ডলী। মুখ্য কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ চালালে গৌণ কুণ্ডলীর গ্যালভানোমিটারে ক্ষণিক বিক্ষেপ দেখা যাবে চিত্র : ১২.৫ খ। আবার তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করার সময়ও গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ দেখা যাবে। তবে এবার বিক্ষেপ বিপরীত দিকে হয়।
পরীক্ষা-২ : এই পরীক্ষার জন্য অন্তরীত তামার তারের দু’টি বন্ধ কুণ্ডলী নিতে হবে। প্রথম কুণ্ডলীতে শুধু একটি গ্যালভানোমিটার সংযুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় কুণ্ডলীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তির উৎসরূপে একটি ব্যাটারি, একটি পরিবর্তনশীল রোধ ও একটি টেপা চাবি সংযুক্ত করতে হবে [চিত্র ১২.৫ ক)। যে কুণ্ডলীতে একটি তড়িচ্চালক শক্তির উৎস সংযুক্ত তাকে মুখ্য কুণ্ডলী বলে। আর যে কুণ্ডলীতে গ্যালভানোমিটার সংযুক্ত সেটি গৌণ কুণ্ডলী। মুখ্য কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ চালালে গৌণ কুণ্ডলীর গ্যালভানোমিটারে ক্ষণিক বিক্ষেপ দেখা যাবে চিত্র : ১২.৫ খ। আবার তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করার সময়ও গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ দেখা যাবে। তবে এবার বিক্ষেপ বিপরীত দিকে হয়।
মুখ্য কুণ্ডলীর তড়িৎপ্রবাহ ক্রমাগত পরিবর্তন
করতে থাকলে গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ দেখা যাবে। এ ক্ষেত্রে তড়িৎপ্রবাহ বৃদ্ধির
সময় বিক্ষেপ যেদিকে হবে তড়িৎ প্রবাহ হ্রাসের সময় বিক্ষেপ তার বিপরীত দিকে হবে।
মুখ্য কুণ্ডলীর তড়িৎপ্রবাহ স্থির রেখে যদি কুণ্ডলীদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব
পরিবর্তন করা হয় তাহলেও গ্যালভানোমিটারে ক্ষণিক বিক্ষেপ দেখা যাবে। দূরত্ব বৃদ্ধি
করলে বিক্ষেপ যেদিকে হবে, দূরত্ব হ্রাস করলে বিক্ষেপ তার বিপরীত দিকে হবে।
বিক্ষেপের হার নির্ভর করবে কত দ্রুত কুণ্ডলীদ্বয়ের দূরত্ব পরিবর্তন করা হয়।
১৫.৬। আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহ
ও আবিষ্ট ভোল্টেজ বা বিভব পার্থক্য
Induced current and induced voltage[edit]
Induced current and induced voltage[edit]
পরীক্ষা দুটি থেকে গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ
বর্তনীতে ভোল্টেজ তথা তড়িৎ প্রবাহের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। সুতরাং কোনো তার
কুণ্ডলীর কাছে আমরা যদি কোনো চুম্বককে নাড়াচাড়া করি, বা আনা নেওয়া করি বা কোনো
চুম্বকের নিকট কোনো তার কুণ্ডলীকে আনা নেওয়া করি তাহলে তার কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ
উৎপন্ন হয়। একে তাড়িতচৌম্বক আবেশ বলে। কোনো তড়িৎবাহী তার বা বর্তনীর নিকট কোনো
তার কুণ্ডলী আনা নেওয়া করলেও তার কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন হয়। একেও
তাড়িতচৌম্বক আবেশ বলে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, একটি গতিশীল চুম্বক বা
তড়িৎবাহী বর্তনীর দূরত্ব বা তড়িৎপ্রবাহের পরিবর্তনের সাহায্যে অন্য একটি সংবদ্ধ
বর্তনীতে ক্ষণস্থায়ী ভোল্টেজ ও তড়িৎ প্রবাহ উৎপন্ন হওয়ার পদ্ধতিকে তাড়িতচৌম্বক
আবেশ বলে। এই ভোল্টেজকে আবিষ্ট ভোল্টেজ এবং প্রবাহকে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহ বলে।
চুম্বক ও কুণ্ডলীর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতি না থাকলে গ্যালভানোমিটারে কোনো বিক্ষেপ দেখা যায় না। আপেক্ষিক গতি যত বেশি হয় বিক্ষেপের পরিমাণও তত বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বলা যায়, চুম্বক ও কুণ্ডলীর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতি যতক্ষণ থাকে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহও ততক্ষণ স্থায়ী হয়। চুম্বকের মেরু পরিবর্তন করলে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়। আবিষ্ট ভোল্টেজ বা তড়িৎপ্রবাহ নিম্নক্তভাবে বৃদ্ধি করা যায়-
চুম্বক ও কুণ্ডলীর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতি না থাকলে গ্যালভানোমিটারে কোনো বিক্ষেপ দেখা যায় না। আপেক্ষিক গতি যত বেশি হয় বিক্ষেপের পরিমাণও তত বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বলা যায়, চুম্বক ও কুণ্ডলীর মধ্যবর্তী আপেক্ষিক গতি যতক্ষণ থাকে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহও ততক্ষণ স্থায়ী হয়। চুম্বকের মেরু পরিবর্তন করলে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়। আবিষ্ট ভোল্টেজ বা তড়িৎপ্রবাহ নিম্নক্তভাবে বৃদ্ধি করা যায়-
·
চুম্বকের মেরুশক্তি বৃদ্ধি করে।
·
চুম্বককে বা তারকুণ্ডলীকে দ্রুত আনা-নেওয়া
করে।
·
তারকুণ্ডলীর পাক বা পেঁচের সংখ্যা বৃদ্ধি
করে।
আমরা জানি যে, তড়িৎবাহী তার নিজস্ব একটি
চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। শক্তিশালী চুম্বকের বিপরীত মেরুদ্বয়ের মধ্যে সৃষ্ট
চৌম্বকক্ষেত্র এবং তড়িৎবাহী তারের চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া
ঘটে।
তোমাদের শিক্ষক এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া
তোমাদের দেখাতে পারেন। তোমরা নিজে বা শিক্ষকের সহায়তায় এটা করে দেখতে পার।
চিত্রের মত করে একটি শক্তিশালী চুম্বকের দুই প্রান্তের মধ্যে একটি তড়িৎবাহী তারকে
রাখ। এই তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত কর। দেখবে এটি উপরের দিকে লাফিয়ে উঠবে।
এর ফলে বোঝা যায় যে, একটি বল এর উপর কাজ করছে। এই বল কোথা থেকে এল?
তুমি যদি চিত্র :
১২.৭ (ক) এর দিকে তাকাও তাহলে চুম্বকের মেরুদ্বয়ের মধ্যবর্তী বলরেখাগুলো দেখতে পাবে।
তড়িৎপ্রবাহের দরুণ সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রটিও দেখানো হয়েছে। দুইটি ক্ষেত্রের সমন্বয়ে
সৃষ্ট বলরেখাগুলোও ১২.৭ (খ)-তে দেখানো হয়েছে। তারের নিচে তারের উপরের চেয়ে
বলরেখা বেশি। এর কারণ হলো উভয় ক্ষেত্র একই অভিমুখে ক্রিয়া করছে। [চিত্র ১২.৭ (ক)
আবার দেখ]। তারের উপরে ক্ষেত্রদ্বয় পরষ্পরের বিরোধিতা করছে, কয়েকটি বলরেখা একে
অপরকে বাতিল করে দিচ্ছে ফলে সেখানে রেখার সংখ্যা কম। যেহেতু রেখাগুলো পরস্পরকে টান
টান রাখতে চায় (স্থিতিস্থাপক রবার ব্যান্ডের মত) তারা তারের উপর ঊর্ধ্বমুখী বল
প্রয়োগ করে,
তারটি মুক্ত অবস্থায় থাকলে উপরের দিকে
লাফিয়ে ওঠে। তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ বিপরীত করা হলে সে ক্ষেত্রে তারটি নিচের দিকে
যাবে।
ধরা যাক চুম্বকের মেরুদ্বয়ের মধ্যে একটি টান
টান তার ব্যবহার না করে চিত্র ১২.৮ (ক) এর মতো আমরা তারের একটি লুপ বা কুণ্ডলী
ব্যবহার করা হলো। যেহেতু লুপটি অ থেকে বেঁকে ই তে বিপরীত অভিমুখী হয়ে ফিরে এসেছে,
লুপের দুই অর্ধেকের মধ্যে (যতক্ষণ পর্যন্ত চুম্বকটি আছে) পরস্পরের বিপরীতমুখী
তড়িৎ প্রবাহিত হবে। সুতরাং অ তে তারটি উপরের দিকে উঠবে এবং ই তে তারটি নিচের দিকে
নামবে। এর ফলে তারটি দক্ষিণাবর্তে (ঘড়ির কাটার মতো) ঘুরবে। চিত্র :
১২.৮ (খ)-এর মত তারটি যখন খাঁড়া অবস্থায় থাকবে তখন এর উপর কোনো বল ক্রিয়া করবে না।
ফলে এটি থেমে যাবে। লুপটিকে ঘূর্ণায়মান রাখার জন্য আমরা কম্যূটেটর নামক একটি কৌশল
(Device) ব্যবহার করব। এটি সমান দুই অংশে বিভক্ত একটি তামার বলয় বা আংটি (চিত্র
১২.৯ দেখ)-এর প্রত্যেক অর্ধাংশ কয়েলের একটি প্রান্তের সাথে সংযুক্ত থাকে
(যথাক্রমে A ও B তে)। বিভক্ত বলয়ের বাইরের প্রান্তটি একটি সুদৃঢ় কার্বন ব্রাশের
দ্বারা তড়িৎ উৎসের সাথে সংস্পর্শ স্থাপন করে। বিভক্ত বলয়টি কয়েলের সাথে ঘুরে
এবং যখন এর দুই অর্ধেকের মধ্যকার ফাঁক কার্বন ব্রাশের বিপরীতে থাকে তখন কোনো তড়িৎ
প্রবাহিত হবে না। কিন্তু তা সত্বেও এর ঘূর্ণন গতির জড়তার কারণে ঘূর্ণন অব্যাহত
থাকবে এবং পুনরায় ব্রাশের সংস্পর্শে এলে ঘূর্ণনের জন্য নতুনভাবে বল লাভ করবে।
এভাবে ঘূর্ণন অবিরত চলতে থাকবে।
লক্ষণীয় যে, যদিও A ও B তাদের স্থান
পরিবর্তন করেছে কম্যুটেটরের কারেন্টটি আগের মতই লুপের ডান প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ
করবে এবং বাম প্রান্ত দিয়ে রেবিয়ে যাবে। (চিত্র ১২.৯ দেখ) এবং কয়েলটি
দক্ষিণাবর্তেই ঘুরতে থাকবে। এটিই বৈদ্যুতিক মোটরের কার্যনীতি। বৈদ্যুতিক মোটরে
তড়িৎ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে পরিবর্তিত হয়। এর দ্রুতি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
চৌম্বকক্ষেত্রের প্রাবল্য বাড়াতে হবে।
চৌম্বকক্ষেত্রের প্রাবল্য বিভিন্নভাবে বাড়ানো
যেতে পারে। সেগুলো হলো-
·
তড়িৎপ্রবাহ বৃদ্ধি করে
·
কয়েল লুপ বা পেঁচের সংখ্যা বৃদ্ধি করে
·
অধিকতর শক্তিশালী চুম্বক বা অধিক সংখ্যক
পেঁচবিশিষ্ট তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করে
·
কয়েলের দৈর্ঘ্য ও বেধ বাড়িয়ে
যে বৈদ্যুতিক মোটর আমরা ব্যবহার করি তা এই
নীতিতে কাজ করে। কিন্তু এদের ক্ষমতা ও ঘোরার মসৃণতা বৃদ্ধির জন্য এতে অতিরিক্ত
উপাংশ যোগ করতে হয়। একমাত্র একটি কয়েল বা একটি লুপের পরিবর্তে অনেকগুলো কয়েল বা
লুপ তৈরি করা হয় এবং কেন্দ্রীয় অক্ষের চারদিকে তাদেরকে বৃত্তাকারে সাজানো হয়।
এদের প্রত্যেকটিকে তার নিজ নিজ কম্যুটেটরের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এটি নিরবচ্ছিন্ন
ও মসৃণভাবে চলতে সহায়তা প্রদান করে।
প্রতিটি কয়েল নরম লোহার টুকরার (যাকে
আর্মেচার বলা হয়) উপর তারের শত শত পেঁচ দিয়ে তৈরি। এর ফলে তড়িৎ প্রবাহিত হওয়ার
সময় আর্মেচারটি চুম্বকায়িত হয় এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য বৃদ্ধি করে। চিত্র
১২.১০ তে তিনটি
আর্মেচারের ২টি ভাঙা রেখা দ্বারা দেখানো
হয়েছে। চুম্বককে বাঁকিয়ে মেরুগুলো কাছাকাছি এনেও ঘূর্ণনকে বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
ব্যবহার : বৈদ্যুতিক পাখা, পাম্প, রোলিং মিল ইত্যাদিতে তড়িৎ মোটর ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহার : বৈদ্যুতিক পাখা, পাম্প, রোলিং মিল ইত্যাদিতে তড়িৎ মোটর ব্যবহৃত হয়।
যে তড়িৎযন্ত্রে যান্ত্রিক শক্তিকে
তড়িৎশক্তিতে রুপান্তরিত করা হয় তাকে জেনারেটর বলে। তাড়িতচৌম্বক আবেশের উপর
ভিত্তি করে এই যন্ত্রের মূল নীতি প্রতিষ্ঠিত। জেনারেটরও দুই প্রকার হতে পারে। যথা
১। এসি জেনারেটর
২। ডি.সি জেনারেটর
২। ডি.সি জেনারেটর
১। এসি জেনারেটর : এসি জেনারেটর অধিক প্রচলিত বিধায় এর গঠন ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
গঠন : এতে
একটি ক্ষেত্রচুম্বক ঘঝ থাকে। চুম্বকের মধ্যবর্তী স্থানে একটি কাচা লোহার পাতের উপর
একটি তারের আয়তকারে কুণ্ডলী (চিত্রে AB) থাকে। কাচা লোহার পাতটিকে আর্মেচার বলে।
আর্মেচারটিকে চুম্বকের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানে যান্ত্রিক উপায়ে সম দ্রুতিতে
ঘুরানো হয়। আয়তকার কুণ্ডলীর দুই প্রান্ত দুইটি স্প্রিং এর সাথে সংযুক্ত থাকে।
স্প্রিং দুইটি আর্মেচারের একই অক্ষ বরাবর ঘুরতে পারে। দুইটি কার্বন নির্মিত ব্রাশ
এমনভাবে স্থাপন করা হয় যেন তারা যখন আর্মেচার ঘুরতে থাকে তখন স্প্রিং দুইটিকে
স্পর্শ করে থাকে। ব্রাস দুইটির সাথে বহিবর্তনীর R রোধ সংযুক্ত থাকে।
কার্যপ্রণালী : যখন
আর্মেচারটিকে ঘুরানো হয় তখন আর্মেচার কুণ্ডলী চৌম্বকক্ষেত্রের বলরেখাগুলোকে ছেদ
করে এবং তাড়িতচৌম্বক আবেশের নিয়মানুযায়ী কুণ্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট
হয়। এখন কুণ্ডলীটির দুই প্রান্ত বহিবর্তনীর সাথে সংযুক্ত থাকায় বর্তনীতে
পর্যাবৃত্ত তড়িৎপ্রবাহের উৎপত্তি হয়। আবিস্ট তড়িৎপ্রবাহের মান প্রধানত
চৌম্বকক্ষেত্রের প্রাবল্য ও ঘূর্ণন বেগের উপর নির্ভর করে। কুণ্ডলীর একবার ঘূর্ণনের
মধ্যে আবিস্ট তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখও একবার পরিবর্তিত হয়। এভাবে যান্ত্রিক শক্তি
থেকে পরিবর্তী প্রবাহ উৎপন্ন হয়।
যে যন্ত্রের সাহায্যে পর্যাবৃত্ত উচ্চ বিভবকে
নিম্ন বিভবে বা পর্যাবৃত্ত নিম্ন বিভবকে উচ্চ বিভবে রূপান্তরিত করা যায় তাকে
ট্রান্সফর্মার বলে। তাড়িতচৌম্বক আবেশের উপর ভিত্তি করে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়।
এই যন্ত্রে একটি কয়েলে তড়িৎপ্রবাহ পরিবর্তন করে অন্য কয়েলে আবিষ্ট তড়িচ্চালক
শক্তি বা তড়িৎ উৎপাদন করা হয়। ট্রান্সফর্মার সাধারণত দুই প্রকারের হয়। যথা-
১. আরোহী বা স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার (Step up Transformer) : যে ট্রান্সফর্মার অল্প বিভবের অধিক তড়িৎ প্রবাহকে অধিক বিভবের অল্প তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তরিত করে তাকে আরোহী বা স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার বলে।
২. অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার (Step down Transformer): যে ট্রান্সফর্মার অধিক বিভবের অল্প তড়িৎপ্রবাহকে অল্প বিভবের অধিক তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করে তাকে অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার বলে।
ট্রান্সফর্মারের গঠন : একটি কাচা লোহার আয়তাকার মজ্জা বা কোর নেওয়া হয়। এর পরস্পর বিপরীত দুই বাহুতে অন্ত রীত তার পেঁচিয়ে ট্রান্সফর্মার তৈরি করা হয় [চিত্র ১২.১২]। আযতাকার মজ্জার এক বাহুর কুণ্ডলীতে পরিবর্তি প্রবাহ বা বিভব প্রয়োগ করা হয়, একে মুখ্য কুণ্ডলী বলে। অপর যে বিপরীত বাহুর কুণ্ডলীতে পরিবর্তী বিভব আবিষ্ট হয় তাকে গৌণ কুণ্ডলী বলে। আরোহী বা স্টেপআপ ট্রান্সফর্মারের মূখ্য কুণ্ডলীর চেয়ে গৌণ কুণ্ডলীতে তারের পাক সংখ্যা বেশি থাকে। অবরোহী বা স্টেপডাউন ট্রান্সফর্মারে মূখ্য কুণ্ডলীর চেয়ে গৌণ কুণ্ডলীর তারের পাক সংখ্যা কম থাকে।
এনে কর কোনো ট্রান্সফর্মারে nP পেঁচ
বিশিষ্ট মূখ্য কুণ্ডলীতে EP পরিবর্তী
বিভব প্রয়োগ করার ফলে এই কুণ্ডলীতে IP প্রবাহ
পাওয়া গেল। এই প্রবাহ মজ্জাটিকে চুম্বকিত করে চৌম্বক বলরেখা উৎপন্ন করে যা মূখ্য
কুণ্ডলীতে একটি আবিষ্ট ভোল্টেজ বা তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন করে। চৌম্বক বলরেখার
যদি কোনো ক্ষরণ না হয় তাহলে গৌণ কুণ্ডলীর প্রতি পাকেও একই সংখ্যক বলরেখা সংযুক্ত
হবে। ফলে গৌণ কুণ্ডলীতেও ভোল্টেজ বা তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হবে। গৌণ কুণ্ডলীর
পাক সংখ্যা nS এবং
গৌণ কুণ্ডলীতে আবিষ্ট ভোল্টেজ বা তড়িচ্চালক শক্তি ES হলে
মুখ্য ও গৌণ কুণ্ডলীর ভোল্টেজ ও তারের পাকসংখ্যার সম্পর্ক হবে,

যখন nS >
nP, তখন ট্রান্সফর্মারটি
আরোহী বা স্টেপআপ ট্রান্সফর্মার এবং যখন nS <
nP, তখন ট্রান্সফর্মারটি
অবরোহী বা স্টেপডাউন ট্রান্সফর্মার। কোনো ক্ষমতার অপচয় না ঘটলে মূখ্য কুণ্ডলীর
প্রযুক্ত সকল ক্ষমতা গৌণ কুণ্ডলীতে সরবরাহ হবে। সুতরাং, মূখ্য কয়েলের ভোল্টেজ ×
মূখ্য কয়েলের তড়িৎপ্রবাহ = গৌণ কয়েলের ভোল্টেজ × গৌণ কয়েলের তড়িৎপ্রবাহ
অর্থাৎ,


এর অর্থ এই যে, কোনো ট্রান্সফর্মার যে হারে
ভোল্টেজ কমায় ঠিক সে হারে তড়িৎ প্রবাহ বৃদ্ধি করে যাতে ক্ষমতার পরিমাণ সমান বা
ধ্রুব থাকে। সুতরাং ট্রান্সফর্মার ভোল্টেজ ও তড়িৎ প্রবাহ উভয়কেই রূপান্তর করে।
দূরদূরান্তে তড়িৎ প্রেরণের জন্য আরোহী বা স্টেপআপ ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়। অবরোহী বা স্টেপডাউন ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয় নিম্ন ভোল্টেজ ব্যবহারকারীর যন্ত্রপাতি যেমন রেডিও, টেলিভিশন, টেপরেকর্ডার, ভিসিআর, ভিসিপি, ইলেকট্রিক ঘড়ি, ওয়াকম্যান ইত্যাদিতে।
দূরদূরান্তে তড়িৎ প্রেরণের জন্য আরোহী বা স্টেপআপ ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয়। অবরোহী বা স্টেপডাউন ট্রান্সফর্মার ব্যবহৃত হয় নিম্ন ভোল্টেজ ব্যবহারকারীর যন্ত্রপাতি যেমন রেডিও, টেলিভিশন, টেপরেকর্ডার, ভিসিআর, ভিসিপি, ইলেকট্রিক ঘড়ি, ওয়াকম্যান ইত্যাদিতে।
গানিতিক উদাহরন ১২.১
একটি ট্রান্সফর্মারের মূখ্য কুণ্ডলীতে ভোল্টেজ 10V এবং প্রবাহ 6A। গৌণ কুণ্ডলীর ভোল্টেজ 20V হলে, গৌণ কুণ্ডলীর প্রবাহ নির্ণয় কর।
আমরা জানি,
![]() ![]() Ans: 3A |
এখানে,
মুখ্য কুণ্ডলীর ভোল্টেজ,
![]() গৌণ কুণ্ডলীর ভোল্টেজ, ![]() মুখ্য কুণ্ডলীর প্রবাহ, ![]() গৌণ কুণ্ডলীর প্রবাহ, ![]() |
গানিতিক উদাহরন ১২.২
একটি ট্রান্সফর্মারের মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা 50, ভোল্টেজ 210V। এর গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা 100 হলে ভোল্টেজ কত ?
আমরা জানি,
![]() ![]()
Ans: 420V
|
এখানে,
মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা
![]() মুখ্য কুণ্ডলীর ভোল্টেজ, ![]() গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা, ![]() গৌণ কুণ্ডলীর ভোল্টেজ, ![]() |
গাণিতিক উদাহরণ : ১২.৩: একটি ট্রান্সফর্মারের মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা 18 এবং গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা 90, মুখ্য কুণ্ডলীর তড়িৎ প্রবাহ 7A হলে গৌণ কুণ্ডলীর প্রবাহ কত ?
আমরা জানি :
![]() বা, ![]() ![]() উত্তর : 1.4A |
এখানে,
মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা
![]() মুখ্য কুণ্ডলীর তড়িৎ প্রবাহ, ![]() গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা, ![]() গৌণ কুণ্ডলীর তড়িৎ প্রবাহ, ![]() |
No comments:
Post a Comment