দশম অধ্যায় স্থিরতড়িৎ
সূচিপত্র
ভৌত রাশি ও পরিমাপ
গতি
বল
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
পদার্থের অবস্থা ও চাপ
বস্তুর উপর তাপের প্রভাব
তরঙ্গ ও শব্দ
আলোর প্রতিফলন
আলোর প্রতিসরণ
দশম অধ্যায় স্থিরতড়িৎ
একাদশ অধ্যায় চল তড়িৎ
তড়িতের চৌম্বক ক্রিয়া
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স
জীবন বাঁচাতে পদার্থবিজ্ঞান
সূত্রাবলি
গতি
বল
কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি
পদার্থের অবস্থা ও চাপ
বস্তুর উপর তাপের প্রভাব
তরঙ্গ ও শব্দ
আলোর প্রতিফলন
আলোর প্রতিসরণ
দশম অধ্যায় স্থিরতড়িৎ
একাদশ অধ্যায় চল তড়িৎ
তড়িতের চৌম্বক ক্রিয়া
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স
জীবন বাঁচাতে পদার্থবিজ্ঞান
সূত্রাবলি
[আমরা জানি প্রত্যেক পদার্থেই প্রোটন ও
ইলেকট্রন থাকে। তুমি কি জান যে তোমার শরীরে 1028 টি
এর চেয়েও বেশি প্রোটন এবং প্রায় সমান সংখ্যক ইলেকট্রন আছে। এই ইলেকট্রন ও
প্রোটনের একটি মৌলিক ধর্ম হচেছ আধান (Charge)। প্রোটনের আধানকে ধনাত্মক ও
ইলেকট্রনের আধানকে ঋণাত্মক ধরা হয়। আহিত বন্তু পরস্পরের উপর বল প্রয়োগ করে - যা
তড়িৎ বল নামে পরিচিত। তড়িৎ বল প্রকৃতির একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বল। এই
অধ্যায়ে আমরা দেখব কীভাবে কোনো বস্তুকে আহিত করা যায়। আমরা আরো দেখব কীভাবে
আধানের অস্তিত্ব বোঝা যায়, কীভাবে তাদের মধ্যকার বল হিসেব করতে হয়। এই অধ্যায়ে
আমাদের আলোচিত আধানগুলো একস্থানে স্থির থাকবে, এই জন্য আমরা এই অধ্যায়কে স্থির
তড়িৎ হিসেবে আখ্যায়িত করেছি। আমরা সবশেষে এই স্থির আধানের ব্যবহার এবং এর থেকে
কিছু বিপদ ও সেই বিপদ থেকে কীভাবে সাবধান থাকতে হবে তাও আলোচনা করব।]
Contents
এক শীতের সকালে সৌরভ তার প্লাস্টিকের
চিরুনীটি হাতে নিল চুল আচড়ানোর জন্য। কিন্তু চুল আঁচড়ানোর আগে সৌরভ চিরুনীটিকে
তার উলের পুলওভারের সাথে কিছুক্ষণ ঘষে নিল। এবার চুল আচড়াতে গেলে সে বিস্ময়ের
সাথে লক্ষ করল যে ঐ চিরুনী দিয়ে চুল আঁচড়ানো যাচ্ছে না, চুলগুলো সব খাড়া হয়ে
গেছে যেন পরস্পরকে বিকর্ষণ করে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সৌরভ এখন চিরুনীটিকে টেবিলের
কাছে আনতেই দেখতে পেল যে, টেবিলের উপর পড়ে থাকা টুকরো কাগজগুলোকে চিরুনীটি আকর্ষণ
করছে। সৌরভের মত এ রকম অভিজ্ঞতা হয়তো তোমাদের অনেকেরই হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন
জীবনে আমরা দেখি যে আমাদের চারপাশের অনেক জিনিসই সৌরভের চিরুনীর মত আচরণ করে।
করে দেখ : তোমার প্লাস্টিকের স্কেলটিকে তোমার শুকনো চুলের সাথে কিছুক্ষণ ঘষে কতগুলো কাগজের টুকরোর কাছে ধর।
|
আমরা দেখি যে, কোনো বস্তু বিশেষ অবস্থায়
অন্য বস্তুকে আকর্ষণ করে বা তড়িৎগ্রস্থ বা আহিত হয় অর্থাৎ বস্তুতে তড়িতের
উৎপত্তি হয়। এই তড়িৎ যেখানে উৎপন্ন হয় সেখানেই থাকে বলে একে স্থির তড়িৎ বলা
হয়। এখন দেখা যাক, তড়িৎগ্রস্থ বা আহিত হওয়া বলতে আমরা কী বুঝি ?
আমরা জানি প্রত্যেক পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। এদেরকে পরমাণু বলে। প্রত্যেক পদার্থের পরমাণু, নিউক্লীয়াসের চারদিকে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত। নিউক্লীয়াসের মধ্যে দুই ধরণের কণা থাকে-প্রোটন ও নিউট্রন। পদার্থ সৃষ্টিকারী মৌলিক কণাসমূহের (ইলেক্ট্রন ও প্রোটন) মৌলিক ও বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মই হচ্ছে আধান বা চার্জ। ইলেকট্রনের আধানকে ঋণাত্মক এবং প্রোটনের আধানকে ধনাত্মক ধরা হয়। নিউট্রন তড়িৎ নিরপেক্ষ অর্থাৎ এতে কোনো আধান নেই। একটি প্রোটনে আধানের পরিমাণ ইলেকট্রনের আধানের সমান। স্বাভাবিকভাবে একটি পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা প্রোটনের সংখ্যার সমান থাকে। ফলে একটা গোটা পরমাণুতে কোনো তড়িৎ ধর্ম প্রকাশ পায় না। বিভিন্ন পদার্থের পরমাণুতে প্রোটন ও ইলেকট্রনের সংখ্যা বিভিন্ন হয়।
কোনো পরমাণুতে যতক্ষণ পর্যন্ত ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তা নিস্তড়িৎ বা তড়িৎ নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু পরমাণুতে এদের সংখ্যা সমান না হলে পরমাণু তড়িৎগ্রস্থ হয় অর্থাৎ আহিত হয়। কোনো পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা কমে গেলে প্রোটনের আধিক্য দেখা দেয়। এ অবস্থাকে বলা হয় ধনাত্মক আধানে আহিত হওয়া। আবার এই বিচ্ছিন্ন ইলেকট্রন অপর কোনো পরমাণুর সাথে যুক্ত হলে সে পরমাণুতে প্রোটনের চেয়ে ইলেকট্রনের সংখ্যা বেড়ে যায়, ফলে ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়। পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হওয়াকে আহিত হওয়া বলে।
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ তথা আধান সহজে চলাচল করতে পারে তাদেরকে পরিবাহক বা পরিবাহী বলে, যেমন ধাতব পদার্থ, মাটি, মানবদেহ প্রভৃতি। সাধারণত ধাতব পদার্থ তড়িৎ সুপরিবাহক হয়। তামা, রূপা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি সুপরিবাহক। অপর পক্ষে যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ তথা আধান চলাচল করতে পারে না তাদেরকে অন্তরক বা অপরিবাহক বলে, যেমন কাঠ, কাগজ, কাচ ইত্যাদি।
আমরা জানি প্রত্যেক পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। এদেরকে পরমাণু বলে। প্রত্যেক পদার্থের পরমাণু, নিউক্লীয়াসের চারদিকে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত। নিউক্লীয়াসের মধ্যে দুই ধরণের কণা থাকে-প্রোটন ও নিউট্রন। পদার্থ সৃষ্টিকারী মৌলিক কণাসমূহের (ইলেক্ট্রন ও প্রোটন) মৌলিক ও বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মই হচ্ছে আধান বা চার্জ। ইলেকট্রনের আধানকে ঋণাত্মক এবং প্রোটনের আধানকে ধনাত্মক ধরা হয়। নিউট্রন তড়িৎ নিরপেক্ষ অর্থাৎ এতে কোনো আধান নেই। একটি প্রোটনে আধানের পরিমাণ ইলেকট্রনের আধানের সমান। স্বাভাবিকভাবে একটি পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা প্রোটনের সংখ্যার সমান থাকে। ফলে একটা গোটা পরমাণুতে কোনো তড়িৎ ধর্ম প্রকাশ পায় না। বিভিন্ন পদার্থের পরমাণুতে প্রোটন ও ইলেকট্রনের সংখ্যা বিভিন্ন হয়।
কোনো পরমাণুতে যতক্ষণ পর্যন্ত ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তা নিস্তড়িৎ বা তড়িৎ নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু পরমাণুতে এদের সংখ্যা সমান না হলে পরমাণু তড়িৎগ্রস্থ হয় অর্থাৎ আহিত হয়। কোনো পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা কমে গেলে প্রোটনের আধিক্য দেখা দেয়। এ অবস্থাকে বলা হয় ধনাত্মক আধানে আহিত হওয়া। আবার এই বিচ্ছিন্ন ইলেকট্রন অপর কোনো পরমাণুর সাথে যুক্ত হলে সে পরমাণুতে প্রোটনের চেয়ে ইলেকট্রনের সংখ্যা বেড়ে যায়, ফলে ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়। পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হওয়াকে আহিত হওয়া বলে।
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ তথা আধান সহজে চলাচল করতে পারে তাদেরকে পরিবাহক বা পরিবাহী বলে, যেমন ধাতব পদার্থ, মাটি, মানবদেহ প্রভৃতি। সাধারণত ধাতব পদার্থ তড়িৎ সুপরিবাহক হয়। তামা, রূপা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি সুপরিবাহক। অপর পক্ষে যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ তথা আধান চলাচল করতে পারে না তাদেরকে অন্তরক বা অপরিবাহক বলে, যেমন কাঠ, কাগজ, কাচ ইত্যাদি।
পরীক্ষণ: একটি হালকা শোলার বলকে একটি সুতার সাহায্যে কোন স্ট্যান্ড বা হুক থেকে ঝুলিয়ে দাও।
এখন একটি শুকনো সিল্কের কাপড়ের টুকরা দিয়ে একটি শুকনো কাচদণ্ডের একপ্রান্ত ভালোভাবে ঘষো। কাচদণ্ড ও রেশমি কাপড়ের টুকরা সূর্যের কিরণে শুকিয়ে গরম করে নিলে ভালো হয়। এখন কাচদণ্ডের ঘষা প্রান্তটি মুক্তভাবে ঝুলানো হালকা শোলার বলের কাছে আনো। |
স্বাভাবিক অবস্থায় পদার্থের পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোটন সমপরিমাণে থাকে। তবে প্রত্যেক পরমাণুরই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইলেকট্রনের প্রতি আসক্তি থাকে। ইলেকট্রনের প্রতি এই আসক্তি বিভিন্ন
বস্তুতে বিভিন্ন রকম। তাই দুটি বস্তুকে যখন
পরস্পরের সংস্পর্শে আনা হয় তখন যে বস্তুর ইলেকট্রন আসক্তি বেশি সে বস্তু অপর
বস্তুটি থেকে ইলেকট্রন সংগ্রহ করে ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়। একটি কাচদণ্ডকে সিল্ক
দ্বারা ঘষলে এরকম ঘটনা ঘটে (চিত্র ১০.১)। সিল্কের ইলেকট্রন আসক্তি কাচের চেয়ে
বেশি বলে, এদের যখন পরস্পরের সাথে ঘষা হয়, তখন কাচ থেকে ইলেকট্রন সিল্কে চলে
যায়। এর ফলে সিল্ক ঋণাত্মক আধানে এবং কাচদণ্ড ধনাত্মক অধানে আহিত হয়। এজন্য
কাচদণ্ড শোলাবলকে আকর্ষণ করে (চিত্র ১০.২)। আবার ফ্লানেলের কাপড়ের সাথে ইবোনাইট
বা পলিথিন দণ্ড ঘষলে, পলিথিন দণ্ড ঋণাত্মক আধানে আহিত এবং ফ্লানেলের কাপড় ধনাত্মক
আধানে আহিত হয়। কারণ, পলিথিনের ইলেকট্রন আসক্তি ফ্লানেলের চেয়ে বেশি বলে,
পরস্পরের সাথে ঘর্ষণের ফলে ফ্লানেলের কাপড় থেকে ইলেকট্রন ইবোনাইট দণ্ডে চলে আসে
(চিত্র ১০.৩)।
আমরা দেখেছি যে, দুটি বস্তুর পারস্পরিক
ঘর্ষণের ফলে আধানের উদ্ভব হয়। আবার আহিত বস্তুকে অনাহিত বস্তুর সংস্পর্শে আনলে
অনাহিত বস্তুটি আহিত হয়। কিন্তু অনাহিত বস্তুকে আহিত বস্তুর সংস্পর্শে না এনে
শুধু কাছাকাছি নিয়ে এলেও এটি আহিত হয়। তড়িৎ আবেশের জন্য এরকম হয়।একটি আহিত
বস্তুর কাছে এনে স্পর্শ না করে শুধুমাত্র এর উপস্থিতিতে কোনো অনাহিত বস্তুকে আহিত
করার পদ্ধতিকে তড়িৎ আবেশ বলে। নিচের সহজ পরীক্ষার সাহায্যে তড়িৎ আবেশ ব্যাখ্যা
করা যায়।
পরীক্ষণ :
রাবারের হাতল বিশিষ্ট একটি শুকনো কাচদণ্ডকে রেশম দিয়ে ভালো করে ঘষে এর এক প্রান্ত
হাতে ধরে অপর প্রান্ত একটি অনাহিত পরিবাহক দণ্ড AB এর A প্রান্তের নিকটে আনলে,
পরিবাহকের মুক্ত ইলেকট্রনগুলো কাচদণ্ডের ধনাত্মক আধান দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে A
প্রান্তে সরে আসে (চিত্র ১০.৪ ক)। ফলে B প্রান্তে ইলেকট্রন ঘাটতি সৃষ্টি হয়,
অর্থাৎ B প্রান্ত ধনাত্মক আধানে আহিত হয় এবং A প্রান্ত ঋণাত্মক আধানযুক্ত হয়।
আধান সংগ্রাহক [একটি অপরিবাহী হাতলের প্রান্তে লাগানো ক্ষুদ্র ধাতব পাত বা বল]
দিয়ে B প্রান্ত থেকে কিছু আধান সংগ্রহ করে (চিত্র ১০.৪ খ) তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের
সাহায্যে এর প্রকৃতি নির্ণয় করলে, উপরিউক্ত বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হবে।
এখানে নতুন কোনো আধান উৎপন্ন হয় না। আহিত কাচদণ্ডের উপস্থিতির কারণে সমপরিমাণ বিপরীত জাতীয় আধান পৃথক হয়ে পরিবাহীর দুই প্রান্তে সরে গেছে মাত্র। যতক্ষণ কাচদণ্ডটি অই পরিবাহীর কাছে থাকবে ততক্ষণ বিপরীত আধান এভাবে পৃথক হয়ে পরিবাহীর দুই প্রান্তে অবস্থান করবে। উপরের পরীক্ষায় কাচদণ্ডের ধনাত্মক আধান যা অই পরিবাহীতে আবেশ সৃষ্টি করল তাকে আবেশী আধান বলে। আর অই পরিবাহীতে যে আধানের সঞ্চার হয় তাকে আবিষ্ট আধান বলে।
এখানে নতুন কোনো আধান উৎপন্ন হয় না। আহিত কাচদণ্ডের উপস্থিতির কারণে সমপরিমাণ বিপরীত জাতীয় আধান পৃথক হয়ে পরিবাহীর দুই প্রান্তে সরে গেছে মাত্র। যতক্ষণ কাচদণ্ডটি অই পরিবাহীর কাছে থাকবে ততক্ষণ বিপরীত আধান এভাবে পৃথক হয়ে পরিবাহীর দুই প্রান্তে অবস্থান করবে। উপরের পরীক্ষায় কাচদণ্ডের ধনাত্মক আধান যা অই পরিবাহীতে আবেশ সৃষ্টি করল তাকে আবেশী আধান বলে। আর অই পরিবাহীতে যে আধানের সঞ্চার হয় তাকে আবিষ্ট আধান বলে।
সম্প্রসারিত কর্মকাণ্ড : একটি ফুলানো বেলুনকে তোমার জামার সাথে ঘষ । এর পর এটিকে ঘরের
দেওয়ালের সাথে একটু খানি চেপে ধরে ছেড়ে দাও। কি দেখলে ? বেলুনটি দেওয়ালে আটকে আছে।
সম্প্রসারিত কর্মকাণ্ড : একটি প্লাস্টিকের বস্তুকে জামার সাথে ঘষ । এর পর পানির কল থেকে পড়া একটি ক্ষীণ পানির ধারার কাছে ধর । পানির ধারা বস্তুর দিকে বেকে আসবে । |
বেলুনে সৃষ্ট ঋণাত্মক আধান দেওয়ালে আবেশ
সৃষ্টি করে। দেওয়ালে আবিষ্ট ধনাত্মক আধান ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট বেলুনকে আকর্ষন করে
রাখে (চিত্র ১০.৫)। একই ঘটনা ঘটে পানির ধারার ক্ষেত্রে (চিত্র ১০.৬)।
গঠন : যে
যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুতে আধানের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি নির্নয় করা যায় তাকে
তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্র বলে। এই যন্ত্রে একটি পিতল বা অন্য কোনো ধাতব দণ্ড R এর উপরে
একটি ধাতব চাকতি বা গোলক আটকানো থাকে (চিত্র ১০.৭)। দণ্ডের নিচের প্রান্তে দুটি
হালকা সোনার পাত সংযুক্ত থাকে। পাত দুটি সোনার বদলে অ্যালুমিনিয়াম বা অন্য কোনো
হালকা ধাতুরও হতে পারে। পাতসহ দণ্ডের নিচের অংশ অপরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি ছিপি C
এর মধ্য দিয়ে একটি কাচ পাত্রের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে। যন্ত্রটি কাচ পাত্রের
ভিতরে থাকায় বায়ু প্রবাহ এর ক্ষতি করতে পারে না।
তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রকে আহিতকরণ : একটি
কাচদণ্ডকে রেশম দিয়ে ঘষলে কাচদণ্ডে ধনাত্মক আধানের উদ্ভব হয়। ঐ আহিত কাচদণ্ডকে
তড়িৎবীক্ষণের চাকতি বা গোলকের গায়ে স্পর্শ করালে দণ্ড হতে খানিকটা আধান চাকতিতে
চলে যায়। এই আধান সুপরিবাহী ধাতব দণ্ডের মধ্য দিয়ে সোনার পাতদ্বয়ে পৌঁছে। ফলে
সোনার পাত দুটি একই জাতীয় আধান পেয়ে পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং পরস্পর থেকে দূরে
সরে যায় বা বিস্ফোরিত হয়। এই অবস্থায় কাচদণ্ড সরিয়ে নিলে যদি পাতদ্বয়ের
মধ্যবর্তী ফাঁক না কমে, তাহলে যন্ত্রটি ধনাত্মক আধানে আহিত হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত
নেওয়া যায়।যন্ত্রকে ঋণাত্মক আধানে আহিত করতে হলে একটি ইবোনাইট দণ্ডকে ফ্লানেল
দ্বারা ঘষে ঋণাত্মক আধানযুক্ত করে উপরিউক্ত প্রক্রিয়ায় চাকতি স্পর্শ করা হয়। এর
ফলে স্বর্ণপাত দুটি ঋণাত্মক আধান পেয়ে পরস্পর থেকে দূরে সরে ফাঁক হয়ে যাবে এবং
সেই অবস্থায়ই থাকবে। আধান যত বেশি হবে, ধাতব পাতগুলোও তত বেশি ফাঁক হয়ে যাবে।
আধানের উপস্থিতি নির্ণয় : কোনো
বস্তুতে আধানের অস্তিত্ব অর্থাৎ কোনো বস্তুতে আধান আছে কি না নির্ণয়ের জন্য
বস্তুটিকে একটি অনাহিত তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির কাছে আনতে হবে। এতে যদি পাত
দুটি পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বস্তুটিতে আধানের অস্তিত্ব আছে।
কিন্তু যদি পাত দুটি পরস্পর থেকে দূরে সরে না যায়, তাহলে বুঝতে হবে বস্তুটিতে
আধান নেই।
আধানের প্রকৃতি নির্ণয় : কোনো তড়িৎগ্রস্ত বস্তুতে কী ধরণের আধান আছে তা জানতে হলে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রটিকে প্রথমে ধনাত্মক কিংবা ঋণাত্মক আধানে আহিত করতে হবে। ধরা যাক, যন্ত্রটিকে ধনাত্মক আধানে আহিত করা হলো। ঐ আবস্থায় পাতদ্বয়ে ধনাত্মক আধান থাকায় এরা ফাঁক হয়ে যাবে। এখন পরীক্ষণীয় বস্তুটিকে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির সংস্পর্শে আনলে যদি পাত দুটির ফাঁক কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ঐ বস্তুটি ঋণাত্মক আধানে আহিত। পক্ষান্তরে পরীক্ষণীয় বস্তুটিকে চাকতির সংস্পর্শে আনলে যদি ফাঁক বেড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বস্তুটি ধনাত্মক আধানে আহিত।
আধানের প্রকৃতি নির্ণয় : কোনো তড়িৎগ্রস্ত বস্তুতে কী ধরণের আধান আছে তা জানতে হলে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রটিকে প্রথমে ধনাত্মক কিংবা ঋণাত্মক আধানে আহিত করতে হবে। ধরা যাক, যন্ত্রটিকে ধনাত্মক আধানে আহিত করা হলো। ঐ আবস্থায় পাতদ্বয়ে ধনাত্মক আধান থাকায় এরা ফাঁক হয়ে যাবে। এখন পরীক্ষণীয় বস্তুটিকে তড়িৎবীক্ষণ যন্ত্রের চাকতির সংস্পর্শে আনলে যদি পাত দুটির ফাঁক কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ঐ বস্তুটি ঋণাত্মক আধানে আহিত। পক্ষান্তরে পরীক্ষণীয় বস্তুটিকে চাকতির সংস্পর্শে আনলে যদি ফাঁক বেড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বস্তুটি ধনাত্মক আধানে আহিত।
বলের প্রকৃতি : একটি
ধনাত্মক আধানে আহিত প্লাস্টিক দণ্ডকে নাইলনের সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো
(চিত্র ১০.৮ ক)। এবার একটি ঋণাত্মক আধানে আহিত পলিথিনের দণ্ডকে এর নিকটে আনা হলো।
কি দেখা যাবে ? প্লাস্টিকের দণ্ডটি পলিথিনের
দণ্ডের দিকে ঘুরে যাবে। এ থেকে বুঝা যায়, দুটি বিপরীত আধানে আহিত বস্তু পরস্পরকে
আকর্ষণ করে।
এবার একটি ধনাত্মক আধানে আহিত প্লাস্টিক
দণ্ডকে ঝুলান ধনাত্মক আধানে আহিত প্লাস্টিকের দণ্ডের দিকে নিয়ে এলে (চিত্র ১০.৮
খ) কি দেখা যাবে? ঝুলান দণ্ডটি দ্রুত দূরে সরে যাবে। অর্থাৎ সমজাতীয় আধান
পরস্পরকে বিকর্ষণ করে।
কুলম্বের সূত্র : আমরা দেখলাম, দুটি বিপরীত জাতীয় আধান পরষ্পরকে আকর্ষণ করে, দুটি সমজাতীয় আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। দুটি আধানের মধ্যবর্তী এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণের বলের মান নির্ভর করে,
কুলম্বের সূত্র : আমরা দেখলাম, দুটি বিপরীত জাতীয় আধান পরষ্পরকে আকর্ষণ করে, দুটি সমজাতীয় আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। দুটি আধানের মধ্যবর্তী এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণের বলের মান নির্ভর করে,
1.
আধান দুটির পরিমাণের উপর।
2.
আধান দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর।
3.
আধান দুটি যে মাধ্যমে অবস্থিত তার প্রকৃতির
উপর।
দুটি আধানের মধ্যবর্তী আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল
সম্পর্কে বিজ্ঞানী কুলম্ব একটি সূত্র বিবৃত করেন। একে কুলম্বের সূত্র বলে।
সূত্র : নির্দিষ্ট
মাধ্যমে দুটি বিন্দু আধানের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান
আধানদ্বয়ের গুণফলের সমানুপাতিক, মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই
বল এদের সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।
ধরা যাক, দুটি আধানের পরিমান যথাক্রমে q1 ও q2 এবং এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব d (চিত্র ১০.৯)। এদের মধ্যবর্তী ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল F হলে, কুলম্বের সূত্রানুসারে,

বা,
.... ... ..... .... ....
(10.1)
এখানে C একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। শূন্যস্থানের জন্য এর মান 9×109<\sup>Nm²C2 । একে অনেক সময় কুলম্বের ধ্রুবক বলা হয়।
আধানের একক : আধানের একক হচ্ছে কুলম্ব (C)। এটি একটি লব্ধ একক। অ্যম্পিয়ারের সাহায্যে এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়।
কোনো পরিবাহকের মধ্য দিয়ে এক অ্যাম্পিয়ার (1A) প্রবাহ এক সেকেন্ড (1s) ধরে চললে এর যে কোনো প্রস্থচ্ছেদ দিয়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তাকে এক কুলম্ব (1C) বলে।
গাণিতিক উদাহরণ ১০.১ : একটি 20C এর আহিত বস্তুকে শূন্যস্থানে আপর একটি 50C এর আহিত বস্তু থেকে 2m দূরে রাখা হলো। এদের মধ্যবর্তী বলের মান নির্নয় কর।
ধরা যাক, দুটি আধানের পরিমান যথাক্রমে q1 ও q2 এবং এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব d (চিত্র ১০.৯)। এদের মধ্যবর্তী ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল F হলে, কুলম্বের সূত্রানুসারে,

বা,

এখানে C একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। শূন্যস্থানের জন্য এর মান 9×109<\sup>Nm²C2 । একে অনেক সময় কুলম্বের ধ্রুবক বলা হয়।
আধানের একক : আধানের একক হচ্ছে কুলম্ব (C)। এটি একটি লব্ধ একক। অ্যম্পিয়ারের সাহায্যে এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়।
কোনো পরিবাহকের মধ্য দিয়ে এক অ্যাম্পিয়ার (1A) প্রবাহ এক সেকেন্ড (1s) ধরে চললে এর যে কোনো প্রস্থচ্ছেদ দিয়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তাকে এক কুলম্ব (1C) বলে।
গাণিতিক উদাহরণ ১০.১ : একটি 20C এর আহিত বস্তুকে শূন্যস্থানে আপর একটি 50C এর আহিত বস্তু থেকে 2m দূরে রাখা হলো। এদের মধ্যবর্তী বলের মান নির্নয় কর।
আমরা জানি,
![]() 9×109Nm²C2× ![]() 2.25×1012N |
এখানে,
১ম আধান, q1=20C ২য় আধান, q2=50C দূরত্ব, d= 2m বল, F= ? |
ধরা যাক A একটি ধনাত্মক আধানের বস্তু। এখন P
বিন্দুতে (চিত্র ১০.১০) যদি একটি আধান +q রাখা হয়
তাহলে A বস্তুর আধানের জন্য +q আধান টি একটি
বল অনুভব করবে। আমরা বলি P বিন্দুতে একটি তড়িৎ ক্ষেত্র বিরাজ করছে যার উৎস হচ্ছে
আহিত বস্তু A। অর্থাৎ, একটি আহিত বস্তুর নিকটে অন্য একটি আহিত বস্তু আনলে সেটি
আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল অনুভব করে। আহিত বস্তুর চারদিকে যে অঞ্চল জুড়ে এই প্রভাব
বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলকেই এই বস্তুটির তড়িৎ ক্ষেত্র বলে।
তড়িৎ তীব্রতা: কুলম্বের সূত্র থেকে দেখা যায় যে, P বিন্দুটি A বস্তুটির যত নিকটবর্তী হয় ঐ বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্রের সবলতাও তত বৃদ্ধি পায়। তড়িৎ ক্ষেত্রের সবলতাকে তীব্রতা বলা হয় । তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ তীব্রতা বলে। যদি P বিন্দুতে স্থাপিত আধানটি F বল লাভ করে তাহলে P বিন্দুর তড়িৎ তীব্রতা,

তড়িৎ তীব্রতা একটি ভেক্টর রাশি এবং এর দিক হচ্ছে তড়িৎ ক্ষেত্রে স্থাপিত ধনাত্মক আধানের উপর ক্রিয়াশীল বলের দিকে। তড়িৎ তীব্রতার একক হচ্ছে নিউটন / কুলম্ব (NC-1)।
তড়িৎ তীব্রতা: কুলম্বের সূত্র থেকে দেখা যায় যে, P বিন্দুটি A বস্তুটির যত নিকটবর্তী হয় ঐ বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্রের সবলতাও তত বৃদ্ধি পায়। তড়িৎ ক্ষেত্রের সবলতাকে তীব্রতা বলা হয় । তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ তীব্রতা বলে। যদি P বিন্দুতে স্থাপিত আধানটি F বল লাভ করে তাহলে P বিন্দুর তড়িৎ তীব্রতা,

তড়িৎ তীব্রতা একটি ভেক্টর রাশি এবং এর দিক হচ্ছে তড়িৎ ক্ষেত্রে স্থাপিত ধনাত্মক আধানের উপর ক্রিয়াশীল বলের দিকে। তড়িৎ তীব্রতার একক হচ্ছে নিউটন / কুলম্ব (NC-1)।
গাণিতিক উদাহরণ ১০.২ : কোনো
তড়িৎ ক্ষেত্রে 5C এর একটি আহিত বস্তু স্থাপন করলে যদি সেটি 200N বল লাভ করে তবে ঐ
বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্রের তীব্রতার মান নির্ণয় কর।
আমরা জানি,
![]() ![]() =40NC-1 উ: 40NC-1 |
এখানে,
আধান, q = 5C বল, F = 200N তড়িৎ তীব্রতা , E = ? |
তড়িৎ বলরেখা : তড়িৎ ক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ বলরেখার অবতারণা করেন। কোনো তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে এটি বল লাভ করবে। যদি আধানটি মুক্ত হয় তবে সেটি এই বল লাভের ফলে স্থির না থেকে একটি নির্দিষ্ট পথে চলবে। তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি মুক্ত ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে এটি যে পথে পরিভ্রমণ করে তাকে তড়িৎ বলরেখা বলে। বলরেখার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। এই রেখাগুলো কাল্পনিক। তড়িৎ বলরেখা তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে তড়িৎ তীব্রতার পরিমাপ ও দিক ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখাগুলো এমন হয় যে, তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে বলরেখার সাথে অঙ্কিত স্পর্শক ঐ বিন্দুতে তড়িৎ তীব্রতার দিক নির্দেশ করে। বলরেখার সাথে লম্বভাবে অবস্থিত একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত বলরেখার সংখ্যা তীব্রতার সমানুপাতিক। কোনো তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখার চিত্রে বলরেখার মধ্যবর্তী ফাঁক তড়িৎ তীব্রতার মান নির্দেশ করে। তড়িৎ ক্ষেত্রের যে সব এলাকায় বলরেখাগুলো কাছাকাছি অবস্থিত, অর্থাৎ ঘনসন্নিবিষ্ট সেখানে E এর মান বেশি, আর যে সব এলাকায় বলরেখাগুলো দূরে দূরে অবস্থিত সে সব স্থানে E এর মান ছোট বা কম হয়।
আহিত বস্তুর বিভিন্ন অবস্থানের জন্য তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখার প্রকৃতি ভিন্ন হয়। নিচে কয়েকটি তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখা বর্ণনা করা হলো। আলোচনার সুবিধার্থে পরিবাহকগুলোকে গোলাকার ধরা হয়েছে।
·
1 একটি পৃথক ধনাত্মক আধানের জন্য বলরেখার
প্রকৃতি ১০.১১ (ক) চিত্রে দেখানো হলো। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো পরিবাহকের পৃষ্ঠ থেকে
লম্ব বরাবর সুষমভাবে বের হয়েছে। বস্তুটির আধানের পরিমাণ বাড়লে বলরেখার সংখ্যাও
বাড়বে।
·
2 দুটি সমান ও বিপরীত জাতীয় আধান দ্বারা সৃষ্ট
তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখা ১.১১ (খ) চিত্রে দেখানো হলো। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো ধনাত্মক
আধান থেকে বের হয়ে ঋণাত্মক আধানে প্রবেশ করে।
·
3 সমান মানের দুটি ধনাত্মক আধান পাশাপাশি
স্থাপন করলে এদের সৃষ্ট তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখা ১.১১ (গ) চিত্রে দেখানো
হলো। এক্ষেত্রে বলরেখাগুলো পরস্পর থেকে দূরে
সরে যাবে, ফলে দুই আধানের মাঝখানে কোনো বলরেখা থাকে না। চিত্রে এই স্থানকে X চিহ্ন
দিয়ে দেখানো হলো। এই স্থানে কোনো আধান স্থাপন করলে সেটি কোনো বল লাভ করবে না। এই
বিন্দুকে নিরপেক্ষ বিন্দু বলা হয়।
·
4 দুটি অসমান ধনাত্মক আধানের জন্য সৃষ্ট
তড়িৎ ক্ষেত্রের বলরেখা ১.১১ (ঘ) চিত্রে দেখানো হলো। এক্ষেত্রে
নিরপেক্ষ বিন্দু N ক্ষুদ্রতর আধানের
নিকটবর্তী হবে।
তড়িৎ বিভব
তড়িৎ ক্ষেত্রের যেমন তীব্রতা থাকে, তেমনি
তড়িৎ ক্ষেত্রের বিভবও থাকে। বিভব দ্বারা নির্ধারিত হবে তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি আধান
কোনো দিকে গতিশীল হবে বা দুটি পরিবাহক সংযুক্ত করলে কোন পরিবাহক থেকে কোন পরিবাহকে
আধান প্রবাহিত হবে। তড়িৎ ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আহিত বস্তুটির আধান ধনাত্মক হলে একটি
ধনাত্মক আধানকে বস্তুর দিকে আনতে বিকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। সুতরাং,
অসীম থেকে একটি একক ধনাত্মক আধানকে বস্তুর যত নিকটবর্তী কোনো বিন্দুতে আনতে হবে তত
বেশি কাজ করতে হবে। তাই ধনাত্মকভাবে আহিত একটি বস্তুর তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে একটি
বিন্দু বস্তুটির যত নিকটে হবে তার বিভবও তত বেশি হবে। ধনাত্মকভাবে আহিত একটি
বস্তুর তড়িৎ ক্ষেত্রে স্থাপিত একটি ধনাত্মক আধান যদি মুক্তভাবে চলতে পারে, তবে
সেটি ধনাত্মকভাবে আহিত বস্তু থেকে দূরে সরে যাবে। সুতরাং বলা চলে ধনাত্মক আধান
উচ্চ বিভব থেকে নিম্ন বিভবের দিকে চলে। অপরপক্ষে ঋণাত্মক আধান ধনাত্মক ভাবে আহিত
বস্তুর দিকে চলে। সুতরাং, ঋণাত্মক আধান নিম্নবিভব থেকে উচ্চ বিভবের দিকে চলে।
ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আহিত বস্তুটি ঋণাত্মকভাবে আহিত হলে একটি একক ধনাত্মক আধানকে ঐ
বস্তুর দিকে আনতে আকর্ষণ বল দ্বারা কাজ সম্পন্ন হবে। ঋণাত্মকভাবে আহিত বস্তুর
তড়িৎ ক্ষেত্রে অসীম থেকে ধনাত্মক আধান বস্তুর দিকে আসতে নিজেই কাজ করে। ফলে
আধানটি শক্তি হারায় এবং তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভবকে ঋণাত্মক ধরা হয়।
বিভবের পরিমাপ : অসীম দূরত্ব থেকে প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমান কাজ সম্পন্ন হয় তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে। আবার, অসীম থেকে প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে পরিবাহকের খুব নিকটে আনতে তড়িৎ বল দ্বারা বা তড়িৎ বলের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে ঐ পরিবাহকের বিভব বলে।
অসীম থেকে ক্ষুদ্র আধান q কে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে বা পরিবাহকের খুব নিকটে আনতে যদি সম্পন্ন কাজের পরিমাণ W হয়, তবে ঐ বিন্দুর বা ঐ পরিবাহকের বিভব V হবে
.... .... .... ....
(10.3)
বিভবের পরিমাপ : অসীম দূরত্ব থেকে প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমান কাজ সম্পন্ন হয় তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ বিভব বলে। আবার, অসীম থেকে প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে পরিবাহকের খুব নিকটে আনতে তড়িৎ বল দ্বারা বা তড়িৎ বলের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে ঐ পরিবাহকের বিভব বলে।
অসীম থেকে ক্ষুদ্র আধান q কে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে বা পরিবাহকের খুব নিকটে আনতে যদি সম্পন্ন কাজের পরিমাণ W হয়, তবে ঐ বিন্দুর বা ঐ পরিবাহকের বিভব V হবে

দুটি আহিত পরিবাহককে তড়িৎগতভাবে যুক্ত করলে
কোন দিক দিয়ে আধান প্রবাহিত হবে তড়িৎ বিভব দ্বারা তা নির্ধারিত হয়।
দুটি আধানযুক্ত ধাতব গোলককে একটি পরিবাহক তার দ্বারা যুক্ত করলে (চিত্র ১০.১২) নিচের যে কোনো একটা ঘটনা ঘটতে পারে।
দুটি আধানযুক্ত ধাতব গোলককে একটি পরিবাহক তার দ্বারা যুক্ত করলে (চিত্র ১০.১২) নিচের যে কোনো একটা ঘটনা ঘটতে পারে।
1.
বাম গোলক থেকে কিছু আধান ডান গোলকে যেতে
পারে।
2.
ডান গোলক থেকে কিছু আধান বাম গোলকে যেতে
পারে।
3.
আধান যেমন ছিল তেমনই থাকতে পারে।
আধান কোন গোলক থেকে কোন গোলকে যাবে তা কিন্তু
গোলকদ্বয়ের আধানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না। এটি নির্ভর করে যে বিষয়টির উপর
তাকে তড়িৎ বিভব বলা হয়। যে গোলকের বিভব বেশি তা থেকে কম বিভবের গোলকে ধনাত্মক
আধান প্রবাহিত হবে। দুটি গোলকের বিভব সমান না হওয়া পর্যন্ত আধানের এই প্রবাহ
চলবে।
সুতরাং, বিভব হচ্ছে আহিত পরিবাহকের তড়িৎ
অবস্থা যা নির্ধারণ করে ঐ পরিবাহকটি অন্য কোনো পরিবাহকের সাথে তড়িৎগতভাবে যুক্ত
করলে আধান দেবে না নেবে।
তাপমাত্রা ও তরলের মুক্ততলের সাথে বিভবের সাদৃশ্য : তাপবিজ্ঞান ও উদস্থিতিবিদ্যায় যথাক্রমে তাপমাত্রা ও তরলের মুক্ততল যে ভূমিকা পালন করে থাকে স্থির তড়িৎবিদ্যায় বিভবও সেই একই ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা জানি, দুটি বস্তুকে তাপীয়ভাবে সংযুক্ত করলে তাদের মধ্যে তাপের আদান প্রদান হতে পারে। তাপের প্রবাহ বস্তুর ভর তথা তাপের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না -তাপের প্রবাহ নির্ভর করে তাপমাত্রার উপর। অত্যন্ত উত্তপ্ত একটি বস্তুকে তার চেয়ে অনেকগুণ ভারী কিন্তু কম তাপমাত্রা বিশিষ্ট অপর বস্তুর সাথে সংযুক্ত করলে তাপ ছোট বস্তু থেকে বড় বস্তুতে প্রবাহিত হবে, যদিও বড় বস্তুর তাপের পরিমাণ ছোট বস্তুর মধ্যস্থ তাপের পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি।
তাপমাত্রা ও তরলের মুক্ততলের সাথে বিভবের সাদৃশ্য : তাপবিজ্ঞান ও উদস্থিতিবিদ্যায় যথাক্রমে তাপমাত্রা ও তরলের মুক্ততল যে ভূমিকা পালন করে থাকে স্থির তড়িৎবিদ্যায় বিভবও সেই একই ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা জানি, দুটি বস্তুকে তাপীয়ভাবে সংযুক্ত করলে তাদের মধ্যে তাপের আদান প্রদান হতে পারে। তাপের প্রবাহ বস্তুর ভর তথা তাপের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না -তাপের প্রবাহ নির্ভর করে তাপমাত্রার উপর। অত্যন্ত উত্তপ্ত একটি বস্তুকে তার চেয়ে অনেকগুণ ভারী কিন্তু কম তাপমাত্রা বিশিষ্ট অপর বস্তুর সাথে সংযুক্ত করলে তাপ ছোট বস্তু থেকে বড় বস্তুতে প্রবাহিত হবে, যদিও বড় বস্তুর তাপের পরিমাণ ছোট বস্তুর মধ্যস্থ তাপের পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি।
একই অনুভূমিক তলে স্থাপিত দুটি পাত্র A ও B
একটি নল দ্বারা স্টপ-কক S এর মাধ্যমে যুক্ত আছে (চিত্র ১০.১৩)। স্টপ-কক বন্ধ করে A
ও B তে পানি ঢালা হলো যাতে A ও B উভয় নলে পানির উচ্চতা সমান হয়। B নলের ব্যাস A
নলের ব্যাসের চেয়ে অনেক বড় হওয়ায় একই উচ্চতা পর্যন্ত পানি পূর্ণ করতে B নলের
জন্য অনেক বেশি পানির প্রয়োজন হবে। এখন যদি স্টপ-কক খুলে দেওয়া হয় তবে দেখা
যাবে তাদের উচ্চতার কোনো পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ পানির প্রবাহ ঘটে না। দুই নলের
মধ্যে পানির পরিমাণ ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও উচ্চতা সমান থাকার জন্য পানির প্রবাহ
হচ্ছে না। এখন যদি পুনরায় স্টপ-কক বন্ধ করে A নলে সামান্য পরিমাণ পানি ঢালা হয় তবে
A-তে পানির পরিমাণ B এর চেয়ে কমই থাকবে কিন্তু এর উচ্চতা অল্প বৃদ্ধি পাবে। এরপর
স্টপ-কক খুলে দেখা যায় যে A থেকে পানি B তে প্রবাহিত হয় এবং পুনরায় A ও B -এর
পানির স্তম্ভের উচ্চতা সমান হয়। এ থেকে বুঝা যায়, পানির প্রবাহ অর্থাৎ
আদান-প্রদান পানির পরিমাণের উপর নির্ভর করে না উচ্চতার উপর নির্ভর করে।
ধরা যাক, দুটি পরিবাহক ধনাত্মকভাবে আহিত। প্রথম পরিবাহকের আধানের পরিমাণ দ্বিতীয় পরিবাহকের আধানের চেয়ে বেশি, কিন্তু প্রথমটির বিভব দ্বিতীয়টির চেয়ে কম। এখন পরিবাহক দুটিকে একটি পরিবাহক তার দিয়ে সংযুক্ত করলে দ্বিতীয় পরিবাহক থেকে প্রথম পরিবাহকে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হবে। আধানের পরিমাণ প্রথম পরিবাহকে বেশি হওয়া সত্ত্বেও বিভব কম হওয়ায় এটি আধান গ্রহণ করে। আধানের প্রবাহের ফলে যখন পরিবাহক দুটির বিভব সমান হবে তখন আধানের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
সুতরাং, বলা যায়, তাপবিজ্ঞানে তাপমাত্রার ভূমিকা, উদস্থিতিবিদ্যায় তরলের মুক্ততলের ভূমিকা আর স্থির তড়িৎবিদ্যায় বিভবের ভূমিকা একই।
পৃথিবী বা ভূমির বিভব শূন্য : পৃথিবী একটি তড়িৎ পরিবাহক। কোনো আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে যুক্ত করলে বস্তুটি নিস্তড়িত হয়। ধনাত্মকভাবে আহিত বস্তুকে ভূ-সংযুক্ত করলে পৃথিবী থেকে ইলেকট্রন এসে বস্তুকে নিস্তড়িত করে। আর ঋণাত্মকভাবে আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করলে বস্তু থেকে ইলেকট্রন ভূমিতে প্রবাহিত হয়, ফলে বস্তুটি নিস্তড়িত হয়। পৃথিবী এত বিরাট যে, এতে আধান যোগ-বিয়োগ করলে এর বিভবের পরিবর্তন হয় না। যেমন, সমুদ্র থেকে পানি তুলে নিলে বা সমুদ্রে পানি ঢালা হলে এর পানি তলের কোনো পার্থক্য হয় না। পৃথিবী বিভিন্ন বস্তু থেকে প্রতিনিয়ত আধান গ্রহণ করে আবার সাথে সাথে অন্য বস্তুকে আধান সরবরাহও করে, ফলে পৃথিবীকে আধানহীন মনে করা হয়। কোনো স্থানের উচ্চতা নির্ণয়ের সময় সমুদ্রের উপরিতলের উচ্চতাকে যেমন শূন্য ধরা হয় তেমনি বিভব নির্ণয়ের সময় পৃথিবীর বিভবকেও শূন্য ধরা হয়।
ধরা যাক, দুটি পরিবাহক ধনাত্মকভাবে আহিত। প্রথম পরিবাহকের আধানের পরিমাণ দ্বিতীয় পরিবাহকের আধানের চেয়ে বেশি, কিন্তু প্রথমটির বিভব দ্বিতীয়টির চেয়ে কম। এখন পরিবাহক দুটিকে একটি পরিবাহক তার দিয়ে সংযুক্ত করলে দ্বিতীয় পরিবাহক থেকে প্রথম পরিবাহকে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হবে। আধানের পরিমাণ প্রথম পরিবাহকে বেশি হওয়া সত্ত্বেও বিভব কম হওয়ায় এটি আধান গ্রহণ করে। আধানের প্রবাহের ফলে যখন পরিবাহক দুটির বিভব সমান হবে তখন আধানের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
সুতরাং, বলা যায়, তাপবিজ্ঞানে তাপমাত্রার ভূমিকা, উদস্থিতিবিদ্যায় তরলের মুক্ততলের ভূমিকা আর স্থির তড়িৎবিদ্যায় বিভবের ভূমিকা একই।
পৃথিবী বা ভূমির বিভব শূন্য : পৃথিবী একটি তড়িৎ পরিবাহক। কোনো আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে যুক্ত করলে বস্তুটি নিস্তড়িত হয়। ধনাত্মকভাবে আহিত বস্তুকে ভূ-সংযুক্ত করলে পৃথিবী থেকে ইলেকট্রন এসে বস্তুকে নিস্তড়িত করে। আর ঋণাত্মকভাবে আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করলে বস্তু থেকে ইলেকট্রন ভূমিতে প্রবাহিত হয়, ফলে বস্তুটি নিস্তড়িত হয়। পৃথিবী এত বিরাট যে, এতে আধান যোগ-বিয়োগ করলে এর বিভবের পরিবর্তন হয় না। যেমন, সমুদ্র থেকে পানি তুলে নিলে বা সমুদ্রে পানি ঢালা হলে এর পানি তলের কোনো পার্থক্য হয় না। পৃথিবী বিভিন্ন বস্তু থেকে প্রতিনিয়ত আধান গ্রহণ করে আবার সাথে সাথে অন্য বস্তুকে আধান সরবরাহও করে, ফলে পৃথিবীকে আধানহীন মনে করা হয়। কোনো স্থানের উচ্চতা নির্ণয়ের সময় সমুদ্রের উপরিতলের উচ্চতাকে যেমন শূন্য ধরা হয় তেমনি বিভব নির্ণয়ের সময় পৃথিবীর বিভবকেও শূন্য ধরা হয়।
শূন্য, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক বিভব : কোনো
আধানহীন পরিবাহকের বিভবকে শূন্য ধরা হয়। কোনো আহিত পরিবাহককে পৃথিবীর সাথে
সংযুক্ত করলে তার বিভবও শূন্য হয়। কেননা, সংযুক্ত অবস্থায় পৃথিবী ও পরিবাহক
একত্রে একটি পরিবাহকে পরিণত হয়। ধনাত্মক আধানে আহিত পরিবাহকের বিভব ধনাত্মক আর
ঋণাত্মক আধানে আহিত পরিবাহকের বিভব ঋণাত্মক ।
বিভবের একক ভোল্ট : অসীম থেকে প্রতি কুলম্ব (1C) ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যদি এক জুল (1J) কাজ সম্পন্ন হয়, তবে ঐ বিন্দুর বিভবকে এক ভোল্ট (1V) বলে।
তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভব 20V বলতে বুঝায় অসীম থেকে প্রতি কুলম্ব ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের ঐ বিন্দুতে আনতে 20J কাজ সম্পন্ন হয়।
বিভবের একক ভোল্ট : অসীম থেকে প্রতি কুলম্ব (1C) ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যদি এক জুল (1J) কাজ সম্পন্ন হয়, তবে ঐ বিন্দুর বিভবকে এক ভোল্ট (1V) বলে।
তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুর বিভব 20V বলতে বুঝায় অসীম থেকে প্রতি কুলম্ব ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের ঐ বিন্দুতে আনতে 20J কাজ সম্পন্ন হয়।
বিভব পার্থক্য : ধরা
যাক, তড়িৎ ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত A ও B দুটি বিন্দু যাদের বিভব যথাক্রমে VA ও
VB (চিত্র
১০.১৪)। অসীম থেকে প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে A বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ VA এবং
B বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ VB। অতএব প্রতি একক ধনাত্মক
আধানকে B বিন্দু থেকে A বিন্দুতে আনতে কাজের পরিমাণ VA -
VB অর্থাৎ
এই দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য।
প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানান্তর করতে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে এই দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য বলে। বিভব পাথক্যের একক অবশ্যই ভোল্ট।
প্রতি একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানান্তর করতে সম্পন্ন কাজের পরিমাণকে এই দুই বিন্দুর বিভব পার্থক্য বলে। বিভব পাথক্যের একক অবশ্যই ভোল্ট।
তড়িৎ আধানরূপে শক্তি সঞ্চয় করার সামর্থ্যকে
ধারকত্ব বলা হয়। ধারকত্ব বজায় রাখার জন্য উদ্ভাবিত যান্ত্রিক
কৌশলই ধারক। কোনো উৎস থেকে যেমন তড়িৎ কোষ
থেকে ধারক শক্তি সঞ্চয় করে তা পুনরায় ব্যবহার করা হয়। যে কোনো আকৃতির দুটি
পরিবাহকের মধ্যবর্তী স্থানে কোনো অন্ত রক পদার্থ যেমন- বায়ু, কাচ, প্লাস্টিক
ইত্যাদি স্থাপন করে ধারক তৈরি করা হয়। সুতরাং, কাছাকাছি স্থাপিত দুটি পরিবাহকের
মধ্যবর্তী স্থানে অন্তরক পদার্থ রেখে তড়িৎ আধানরূপে শক্তি সঞ্চয় করে রাখার
যান্ত্রিক কৌশলকেই ধারক বলে।
একটি সরল ধারক তৈরি করা হয় দুটি অন্তরিত ধাতবপাতকে পরস্পর সমান্তরালভাবে রেখে। যখন একটি ব্যাটারিকে এর দুটি পাতের সাথে সংযুক্ত করা হয় (চিত্র ১০.১৫), তখন ব্যাটারির ঋণাত্মক দণ্ড থেকে ইলেকট্রন একটি পাতে প্রবাহিত হয় এবং এটি ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়। ধারকের অন্য পাত থেকে ইলেকট্রন ব্যাটারির ধনাত্মক দণ্ডে প্রবাহিত হয়, ফলে ঐ পাত ধনাত্মকভাবে আহিত হয়। পাতগুলোতে কত আধান জমা হবে তা ব্যাটারির ভোল্টেজের উপর নির্ভর করে।
ধারক রেডিও, টেলিভিশন, রেকর্ড প্লেয়ার এবং আন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত বর্তনীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
একটি সরল ধারক তৈরি করা হয় দুটি অন্তরিত ধাতবপাতকে পরস্পর সমান্তরালভাবে রেখে। যখন একটি ব্যাটারিকে এর দুটি পাতের সাথে সংযুক্ত করা হয় (চিত্র ১০.১৫), তখন ব্যাটারির ঋণাত্মক দণ্ড থেকে ইলেকট্রন একটি পাতে প্রবাহিত হয় এবং এটি ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়। ধারকের অন্য পাত থেকে ইলেকট্রন ব্যাটারির ধনাত্মক দণ্ডে প্রবাহিত হয়, ফলে ঐ পাত ধনাত্মকভাবে আহিত হয়। পাতগুলোতে কত আধান জমা হবে তা ব্যাটারির ভোল্টেজের উপর নির্ভর করে।
ধারক রেডিও, টেলিভিশন, রেকর্ড প্লেয়ার এবং আন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত বর্তনীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
১। স্থির বৈদ্যুতিক রং স্প্রে : গাড়ি,
সাইকেল আলমারি বা অন্যান্য জিনিস রং করার জন্য ইদানিং রং এর স্প্রে ব্যবহার করা
হয়। এটি করা হয় স্থির তড়িৎ ব্যবহার করে। স্প্রে গান এমনভাবে তৈরি করা হয় যে
এটি রং এর অতি ক্ষুদ্র্র ক্ষুদ্র আহিত কণা তৈরি করে। রং স্প্রে গানের সূচালো
প্রান্তটি একটি স্থির তড়িৎ জেনারেটর এর এক প্রান্তের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
জেনারেটরের অপর প্রান্তটি যে ধাতব পাতটি রং করতে হবে তার সাথে সংযুক্ত করা হয় যা
অবশ্যই ভূ- সংযুক্ত থাকে। একটি গাড়ি রং করার ক্ষেত্রে স্প্রে গান থেকে নির্গত
আহিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা গাড়ির বাইরের কাঠামো দ্বারা আকৃষ্ট হয়। ফলে গাড়ির
বহিরাবরণের এর উপর রং এর একটি সুষম আস্তরণ পড়ে। এছাড়াও এই ক্ষুদ্র কণাগুলো তড়িৎ
ক্ষেত্রের বল রেখা বরাবর চলে কাঠামোর চিপাচাপা অর্থাৎ এর অপ্রকাশ্য স্থানে পৌঁছে সেখানেও
রং করে।
২। ইঙ্ক জেট প্রিন্টার : এটি হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের প্রিন্টার যা কম্পিউটারের সাথে সংযোগ দেওয়া থাকে। একটি ইঙ্ক-গান তার সূচালো মুখ দিয়ে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালির কণা নিক্ষেপ করে। এই ক্ষুদ্র কণাগুলো ধনাত্মক (+)
২। ইঙ্ক জেট প্রিন্টার : এটি হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের প্রিন্টার যা কম্পিউটারের সাথে সংযোগ দেওয়া থাকে। একটি ইঙ্ক-গান তার সূচালো মুখ দিয়ে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালির কণা নিক্ষেপ করে। এই ক্ষুদ্র কণাগুলো ধনাত্মক (+)
ভাবে আহিত। এই কালির কণাগুলো দুটি পাতের
মধ্যস্থল দিয়ে চলে (চিত্র ১০.১৭)। এই ধনাত্মক কালির কণাগুলোকে ধনাত্মক পাত
বিকর্ষণ করে এবং এগুলো ঋণাত্মক পাতে আকৃষ্ট হয়। একটি কম্পিউটার পাতগুলোর ভোল্টেজ
এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে পাতগুলো কখনো ধনাত্মক, কখনো ঋণাত্মক আধানে আহিত হয় এবং
কালির কণাগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে চলমান কাগজের উপর বিভিন্ন স্থানে পড়ে এবং
প্রয়োজনমত অক্ষর বা ছবির আকৃতি ছাপে। রঙিন ছাপার জন্য চার রকমের রঙিন কালি
ব্যবহার করা হয়।
৩। ফটো কপিয়ার : আজকাল ফটো কপিয়ার বা ফটো কপি মেশিন খুবই প্রয়োজনীয় এবং জনপ্রিয় একটি যন্ত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিবিধ অফিস ছাড়াও সাধারণ জনগণ যে কোনো প্রয়োজনীয় দলিল বা কাগজপত্রের এক বা একাধিক অবিকল কপির জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। এই যন্ত্রেও স্থির তড়িৎ ব্যবহার করা হয়। ফটো কপিয়ারের ভিতরে অন্ধকারে একটি ঘূর্ণায়মান ড্রাম থাকে। এই ড্রামের উপর ধনাত্মক আধান স্প্রে করা হয়। যে পৃষ্ঠা ফটোকপি করতে হবে একটি উজ্জ্বল আলো তাকে আলোকিত করে। পৃষ্ঠার সাদা অংশ আলো প্রতিফলিত করে, কিন্তু অন্ধকার বা ছাপানো অংশ কোনো আলো প্রতিফলিত করে না। প্রতিফলিত আলো ড্রামের উপর কেন্দ্রিভূত হয়। ড্রামের যে স্থানটি সাদা কাগজ দ্বারা প্রতিফলিত আলো পড়ে উজ্জ্বল হয়, সেই অংশ থেকে আধান বের হয়ে যায়। ড্রামের কেবল অন্ধকার অংশই ধনাত্মক আধানে আহিত থাকে। ঋণাত্মকভাবে আহিত কার্বনের পাউডার কালি (টোনার) ড্রামের উপর স্প্রে করা হয়। ঋণাত্মক ভাবে আহিত এই কালির কণাগুলো ড্রামের ধনাত্মকভাবে আহিত অংশের সাথে আঠালোভাবে লেগে থাকে। এক টুকরা সাদা কাগজকে ধনাত্মকভাবে আহিত করা হয়। এটিকে ড্রামের সাথে চেপে রাখা হয়। এই কাগজটি ড্রাম থেকে কার্বন পাউডারের প্যাটার্ণ তার গায়ে তুলে আনে। টোনার (-) টি কাগজ (+) কর্তৃক আকৃষ্ট হবে। কাগজখানা উত্তপ্ত রোলারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এতে টোনারের কালি গলে যায় এবং কাগজের সাথে মিশে যায়, ফলে একটি স্থায়ী কপি তৈরি হয়।
স্থির তড়িতের বিপদ
অনেক ক্ষেত্রে স্থির তড়িতের উপস্থিতি অসুবিধাজনক এবং বিপদ ডেকে আনতে পারে।
বিমানে জ্বালানি ভরা : আকাশে যখন বিমান উড়ে তখন বায়ুর সাথে ঘর্ষণের ফলে এটি তড়িতাহিত হতে পারে। বিমানের আধান বাড়তে থাকলে বিমান ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিভব পার্থক্য বাড়তে থাকে। এত উচ্চ বিভব পার্থক্যের কারণে বিমানে যখন জ্বালানি ভরা হয় তখন কিছু আধান ভূমিতে চলে যাওয়ার সময় স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা বিরাট বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। এই জন্য বিমানের চাকা পরিবাহক রাবার দ্বারা তৈরি করা থাকে, যাতে বিমান ভূমি স্পর্শ করলে বিমানে জমা হওয়া আধান নিরাপদে ভূমিতে চলে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে বিমান ভূমিতে অবতরণের পর যথা সম্ভব তাড়াড়াড়ি এবং জ্বালানি ভরা শুরু করার আগেই একটি পরিবাহক দ্বারা ভূÑসংযুক্ত করা।
৩। ফটো কপিয়ার : আজকাল ফটো কপিয়ার বা ফটো কপি মেশিন খুবই প্রয়োজনীয় এবং জনপ্রিয় একটি যন্ত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিবিধ অফিস ছাড়াও সাধারণ জনগণ যে কোনো প্রয়োজনীয় দলিল বা কাগজপত্রের এক বা একাধিক অবিকল কপির জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। এই যন্ত্রেও স্থির তড়িৎ ব্যবহার করা হয়। ফটো কপিয়ারের ভিতরে অন্ধকারে একটি ঘূর্ণায়মান ড্রাম থাকে। এই ড্রামের উপর ধনাত্মক আধান স্প্রে করা হয়। যে পৃষ্ঠা ফটোকপি করতে হবে একটি উজ্জ্বল আলো তাকে আলোকিত করে। পৃষ্ঠার সাদা অংশ আলো প্রতিফলিত করে, কিন্তু অন্ধকার বা ছাপানো অংশ কোনো আলো প্রতিফলিত করে না। প্রতিফলিত আলো ড্রামের উপর কেন্দ্রিভূত হয়। ড্রামের যে স্থানটি সাদা কাগজ দ্বারা প্রতিফলিত আলো পড়ে উজ্জ্বল হয়, সেই অংশ থেকে আধান বের হয়ে যায়। ড্রামের কেবল অন্ধকার অংশই ধনাত্মক আধানে আহিত থাকে। ঋণাত্মকভাবে আহিত কার্বনের পাউডার কালি (টোনার) ড্রামের উপর স্প্রে করা হয়। ঋণাত্মক ভাবে আহিত এই কালির কণাগুলো ড্রামের ধনাত্মকভাবে আহিত অংশের সাথে আঠালোভাবে লেগে থাকে। এক টুকরা সাদা কাগজকে ধনাত্মকভাবে আহিত করা হয়। এটিকে ড্রামের সাথে চেপে রাখা হয়। এই কাগজটি ড্রাম থেকে কার্বন পাউডারের প্যাটার্ণ তার গায়ে তুলে আনে। টোনার (-) টি কাগজ (+) কর্তৃক আকৃষ্ট হবে। কাগজখানা উত্তপ্ত রোলারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এতে টোনারের কালি গলে যায় এবং কাগজের সাথে মিশে যায়, ফলে একটি স্থায়ী কপি তৈরি হয়।
স্থির তড়িতের বিপদ
অনেক ক্ষেত্রে স্থির তড়িতের উপস্থিতি অসুবিধাজনক এবং বিপদ ডেকে আনতে পারে।
বিমানে জ্বালানি ভরা : আকাশে যখন বিমান উড়ে তখন বায়ুর সাথে ঘর্ষণের ফলে এটি তড়িতাহিত হতে পারে। বিমানের আধান বাড়তে থাকলে বিমান ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিভব পার্থক্য বাড়তে থাকে। এত উচ্চ বিভব পার্থক্যের কারণে বিমানে যখন জ্বালানি ভরা হয় তখন কিছু আধান ভূমিতে চলে যাওয়ার সময় স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা বিরাট বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। এই জন্য বিমানের চাকা পরিবাহক রাবার দ্বারা তৈরি করা থাকে, যাতে বিমান ভূমি স্পর্শ করলে বিমানে জমা হওয়া আধান নিরাপদে ভূমিতে চলে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে বিমান ভূমিতে অবতরণের পর যথা সম্ভব তাড়াড়াড়ি এবং জ্বালানি ভরা শুরু করার আগেই একটি পরিবাহক দ্বারা ভূÑসংযুক্ত করা।
ট্যাংকারে জ্বালানি ভরা : যে
সকল ট্যাংকার লরী পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি জ্বালানি নিয়ে রাস্তা দিয়ে এক স্থান
থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করে তাদের বেলায়ও স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি ও বিস্ফোরণ থেকে
রক্ষা পাওয়ার জন্য জ্বালানি স্থানান্তরের আগে ভূÑসংযুক্ত করে নিতে হয়।
টেলিভিশন ও কম্পিউটারের মনিটর : ব্যবহারকালে
টেলিভিশনের পর্দা ও কম্পিউটারের মনিটর স্থির তড়িতে আহিত হয়। এই আধানগুলো অনাহিত
কণা যেমন ধুলো বালি ইত্যাদি আকর্ষণ করে, ফলে এগুলো তাড়াতাড়ি ময়লা হয়ে যায়। কাপড়
পাল্টানো : আমাদের পরিধেয় কাপড় চোপড়
অনেক সময় নিজেদের মধ্যকার ঘর্ষণের ফলে আহিত হয়ে যেতে পারে। যখন আমরা কাপড় বদলাই
তখন তখন আধান ভূমিতে চলে যাওয়ার সময় আমাদের অল্প শক্ খাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে
অপারেশন থিয়েটার : যেহেতু
ধুলোবালি ও জীবাণু আহিত বস্তু দ্বারা আকৃষ্ট হয়, কাজেই হাসপাতালের অপারেশন
থিয়েটারে সাবধনতা অবলম্বন করা হয় যেন সার্জন, সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ এবং
চিকিৎিসাসামগ্রী আধানমুক্ত থাকে। এ জন্য তাদেরকে ভূÑসংযুক্ত রাখার জন্য পরিবাহক
রাবারের জুতা পরতে হয় এবং হাতে রাবারের গ্লাভস ব্যবহার করতে হয়, যাতে ভূমি থেকে
সহজে ইলেকট্রন আসা যাওয়া করতে পারে।
পেট্রোলবাহী ট্রাকের সাথে ধাতব শিকল ঝুলানো
থাকে : পেট্রোল,
ডিজেল বা অন্য তরল জ্বালানিবাহী ট্যাংকার বা ট্রাকের সাথে একটি ধাতব শিকল লাগানো
থাকে যা ট্রাক চলার সময় রাস্তা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। যখন রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলে
তখন পেট্রোল ট্যাংকের গায়ে বারবার ধাক্কা খায় এবং এদিক ওদিক দুলতে থাকে।
ট্যাংকের সাথে পেট্রোলের এই ঘর্ষণের ফলে আধান সঞ্চিত হয়। যদি ট্যাংকের কিনারা
থেকে একটা স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয় তাহলে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং পেট্রোলে
আগুন ধরে যাবে। কাজেই পেট্রোল আধানের জন্য নিরাপদ স্থান নয়। ট্যাংকের পেছনে শিকল
লাগিয়ে এই তড়িৎ ভূমিতে চলে যাবার পথ তৈরি করা হয়। যেহেতু ধাতু খুব ভালো
পরিবাহী, তাই তড়িৎ ধীরে ধীরে ধাতব শিকলের মধ্য দিয়ে মাটিতে চলে যায়।
বিদ্যুৎ লাইনের সাথে ধাতব খুটির সরাসরি সংযোগ
থাকে না : রাস্তায়
বিদ্যুৎ লাইনের তার খাটাবার সময় ধাতব খুটির সাথে সরাসরি সংযুক্ত করা হয় না। ধাতু
তড়িতের সুপরিবাহী। ধাতব খুটির সাথে সরাসরি সংযোগ করা হলে তারের তড়িৎ খুটির মধ্য
দিয়ে মাটিতে চলে যেত। কেউ ঐ খুটি স্পর্শ করলে সাথে সাথে তড়িৎস্পৃষ্ট হতো এবং
মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতো। তাই অপরিবাহী পোর্সেলিনের কাপের মধ্য দিয়ে তারকে খুটির
সাথে সংযোগ দেওয়া হয়।
বজ্রপাত ও বজ্র নিরোধক : আমরা
জানি বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প থাকে। এই জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের আহিত আয়নগুলোর
উপর ঘনীভূত হয়ে পানি কণার সৃষ্টি করে এবং তড়িতাহিত হয়। এই ধরণের পানির কণাগুলো
একত্রিত হলেই মেঘের উৎপত্তি হয়। মেঘ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যে কোনো ভাবেই আহিত হতে
পারে। তড়িতাহিত দুটি মেঘ কাছাকাছি এলে তাদের মধ্যে তড়িৎক্ষরণ হয়, তখন বিরাট
অগ্নিস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। একে বিদ্যুচ্চমক বলা হয়।
বিদ্যুচ্চমকের সময় মেঘের চারপাশের
বায়ুমণ্ডল হঠাৎ তাপ পেয়ে প্রসারিত হয়। হঠাৎ প্রসারণের ফলে বায়ুমণ্ডলের চাপ কমে
যায়। তখন আশে-পাশের বেশি চাপের বায়ু এসে এই প্রসারিত বায়ুকে সংকুচিত করে। খুব
তাড়াতাড়ি এ ধরণের সংকোচন ও প্রসারণ হয় বলে প্রচণ্ড শব্দের সৃষ্টি হয়। একেই মেঘ
গর্জন বলে। তড়িতাহিত মেঘে যদি তড়িতের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে তা তড়িৎক্ষরণের
মাধ্যমে পৃথিবীতে চলে আসে। একে বলে বজ্রপাত। বজ্রপাতের সাথে সাথে যে শব্দ শোনা
যায় তাকে বলে বজ্রনাদ।
বজ্র নিরোধক : বজ্রপাতের
ফলে যাতে বাড়িÑঘরের ক্ষতি না হয় তার জন্য বজ্র নিরোধক ব্যবহার করা হয়। একটি
ধাতব দণ্ড জ কে (চিত্র ১০.১৮) বাড়ির গা ঘেষে এমনভাবে স্থাপন করা হয় যেন এর
উপরিভাগ ছাদের চেয়েও বেশি উঁচুতে থাকে এবং এর নি¤œভাগ ভালোভাবে মাটিতে পুতে রাখা
হয়। দণ্ডের উপরিভাগে কয়েকটি সূচিমুখ থাকে।
যখন তড়িৎগ্রস্থ মেঘ বাড়ির উপরে আসে, তখন
এটি জ দণ্ডে বিপরীত আধান আবিষ্ট করে। কিন্তু দণ্ডের উপরি প্রান্ত তীক্ষ্ণাগ্র
বিশিষ্ট হওয়ায় ঐ তীক্ষ্ণাগ্রগুলোতে বেশি আধান জমা হয় এবং সূচিমুখ দিয়ে
তড়িৎক্ষরণ হয়। বায়ুকণাগুলো এই আধান নিয়ে আহিত হয় এবং মেঘের বিপরীত আধান
কর্তৃক আকৃষ্ট হয়ে মেঘের দিকে চলে যায় এবং মেঘকে নিস্তড়িত করে। ফলে বজ্রপাতের
সম্ভাবনা কম থাকে।
তড়িৎ সবসময় পরিবাহীর মধ্য দিয়ে
সংক্ষিপ্ততম পথে চলে। মেঘে মেঘে সৃষ্ট তড়িৎ উঁচু বস্তুর ভিতর দিয়ে পৃথিবীতে আসতে
চায়। ঝড় বৃষ্টির সময় তাই ছাতার নিচে, কোনো গাছের নিচে, তড়িৎ পরিবাহী ধাতুর
কাছে, লোহার তৈরি পুল কিংবা কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ালের কাছাকাছি দাঁড়ানোর চেয়ে
বৃষ্টিতে ভেজা অনেক ভালো।
No comments:
Post a Comment